স্বাধীনতাসংগ্রামের অগ্নিঝরা মার্চ আজ শুরু
প্রান্তডেস্ক: বাঙ্গালি জাতির শত বছরের স্বাধীনতাসংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বের অগ্নিঝরা মাস মার্চের শুরু আজ। ১৯৭১ সালের উত্তাল, ঘটনাবহুল এই মাসেই বাংলাদেশের ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের সূচনা হয়। এ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের শুরু এই মার্চে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই মাসেই বাঙালি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ‘যুদ্ধই সবাধীনতা,যুদ্ধইমুক্তি অর্জনের পথ,যুদ্ধই ভাষা বিদ্বেষি শোষকশ্রনীওধর্মন্ধ সাম্প্রদায়িকশক্তি চিরপতনের একমাত্রপথ”।১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত চরম রূপ নেয় তার গোড়াপত্তন অবশ্য হয়েছিল বহু বছর আগে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছেষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম তুঙ্গে ওঠে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের রায় উপেক্ষা করলে বাঙালি বুঝে নেয়, পরাধীনতার অবসানই একমাত্র সমাধান। স্বাধিকারের দাবি পেরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির চোখে তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন। ’একাত্তরের প্রায় পুরো মার্চ মাস দেশ ছিল উত্তাল। নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেওয়া ঠেকাতে ১ মার্চ হঠাৎ এক হঠকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশ। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১ মার্চের ঘটনা সম্পর্কে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর অনন্য স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া দুপুর ১টার সময় রেডিওতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে শহরের সব জায়গায় হৈচৈ পড়ে গেছে। লোকেরা দলে দলে অফিস-আদালত ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেছে।’
জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা পূর্ববাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ই মার্চ রাজধানীর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন। পল্টনে সমাবেশ করেন ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—ডাকসুর নেতারা। প্রতিবাদ মিছিল, সভা-সমাবেশ হয় দেশজুড়েই। ঢাকার রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এভাবে সেই ভাষণেই তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে নামতে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করে সক্রীয় ভাবে স্বাধিনতা সংগ্রমে ঝাপিয়ে পড়ে অর্জন করতে স্বাধীনতা।যা বিজয় লাভ করে ১৯৭১সালের ১৬ডিসেম্বর।