রবীন্দ্রনাথ গুম হননি, ‘আমরাই সরিয়েছিলাম’: প্রক্টর
প্রান্তডেস্ক:বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলছেন, “ভাস্কর্যটি আমরাই সরিয়ে দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজটি করেছে। এ বিষয়ে আমাদের ব্যাখ্যাও আমরা জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “ওটার কোনো দাবিদার ছিল না। কোনো অনুমতি ছাড়াই, অবৈধভাবে কে কোন সময়ে ওটা ওখানে লাগিয়ে রেখেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওটা সরিয়ে দিয়েছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে স্থাপিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুম হওয়া’ ভাস্কর্যটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে থাকার পর,শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী ভাস্কর্যটি সরানোর বিষয়ে কিছু না জানার কথা বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রবীন্দ্রনাথের ‘গুম হওয়ার’ খবর ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর রোববার সন্ধ্যায় প্রক্টরের কাছ থেকে এমন বক্তব্য এসেছে ।
বিষয়টি চার দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “কারণ ওখানে তো ভাস্কর্য থাকার কথা না। প্রতিবাদ ও আন্দোলনের একটা নান্দনিক ভাস্কর্য (রাজু স্মৃতি) ওখানে আছে। তার পাদদেশে বিশাল আকৃতির একটা ভাস্কর্য রেখে চলে গেলাম… সেখানে তো আর কোন ভাস্কর্য থাকার কথা না।
“আর এটা শিল্পসম্মত, সংস্কৃতিমনা কোনো কাজ হয়নি। আমার মনে হয় তারা ভাস্কর্যের নামে এক ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে।”
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ‘সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের’ ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বইমেলার টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশমুখে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের পাশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন একদল শিক্ষার্থী।
ছাত্র ইউনিয়নের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা এটি নির্মাণ করে। ভাস্কর্যটিতে কবিগুরুকে উপস্থাপন করা হয়েছে ভিন্ন রূপে; তার মুখ টেপ দিয়ে বাঁধা, হাতে থাকা কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলিতে ঠুকে আছে পেরেক। বাঁশের খাঁচার কাঠামোর ওপর কর্কশিট ও অন্যান্য হালকা উপাদান দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
ভাস্কর্য স্থাপনের দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেটি আর সেখানে দেখা যায়নি। পরে শিক্ষার্থীরা ওই স্থানে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ শিরোনামের এক ব্যানার টানিয়ে দেন।
পরদিন শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাস্কর্যটির খণ্ডিত অংশ পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা। শনিবার ছিন্নভিন্ন রূপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যটি আবারও আগের জায়গায় বসানো হয়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।
রোববার আলোচিত এ ঘটনার পরম্পরা নিয়ে কথা হয় ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোক্তাদের একজন চারুকলার শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি শিমুল কুম্ভকারের সঙ্গে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ভাস্কর্যটি সেই স্থানে না দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রব্বানীর শরনাপন্ন হন তারা। তখন প্রক্টর তাদের জানিয়ে দেন ভাস্কর্যের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এরপরই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিখোঁজ ভাস্কর্যের জায়গায় ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর প্রক্টর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এ বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করছি।” এদিন তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও একই বক্তব্য দেন, বলেন- তারা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, “ওরা আমাদের কিছুই জানায়নি তো। শুধু ভাস্কর্যটি রেখে চলে গেছে।”
ভাস্কর্য রাখার বিষয়ে নয়, ‘গুম হওয়ার’ বিষয়টি নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন বলে আবারও জানতে চাওয়া হলে প্রক্টর বলছেন, “ওরা যে স্থাপন করেছে এটা আমরা জানি না, সেটা বলেছি। সরিয়ে দিয়েছে যে এটা তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরিয়ে দিয়েছে। এটা তো আমরা প্রথম দিন থেকেই বলেছি।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি সরিয়ে দিয়েছিল। আমরা আশা করছিলাম তারা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিই থাকবে। এখন দেখি এক রকমের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা শুরু করেছে। তাদের নিশ্চই অন্য কোনো হীন উদ্দেশ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু হলে দায়-দায়িত্ব তাদের, এটা আমরা বলে দিয়েছি।”
ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন মনে করছেন, প্রতিবাদী ভাস্কর্যের মাধ্যমে তারা যে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘গুম কাণ্ডে’ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাস্কর্যের গুম হওয়া ও ফিরে আসা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলোচনা হলেও এটি নিয়ে কেউ থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন রূপে; তার মুখ টেপ দিয়ে বন্ধ, আর হাতে থাকা কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলিতে পেরেক ঠোকানো। সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ভাস্কর শিমুল কুম্ভকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন,“ এটা (ভাস্কর্য) আমাদের একটা প্রতিবাদ ছিল। স্থায়ী ভাস্কর্য যেহেতু ছিল না, প্রতিবাদী ছিল তাই আমরা এটা নিয়ে কোন আইনি পদক্ষেপে যাইনি।”
একবার জিডি করার কথা ভাবলেও ভাস্কর্যটি কে বা কারা সরিয়েছে তা না জানা না থাকায় তখন আর থানায় যাননি তারা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “প্রক্টর স্যারও শুরুতে সকালবেলায় আমাদের সাথে একটু মিথ্যা কথা বলেছেন। উনি আমাদের বলেছিলেন উনি একদমই জানেন না, জানার চেষ্টা করছেন। এরকম যখন বলেছেন তখন আমরা ধারণা করি ভাস্কর্যটি কোনো কারণে হয়তো বাইরের কেউ সরাতেও পারে। কোনো রকমের কোন তথ্য ছিল না। তখন এই কারণে কিন্তু ছাত্ররা গিয়ে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’ ব্যানার টাঙিয়ে দেয়।
“এর কিছুক্ষণ পর আমরা জানতে পারি যে ভাস্কর্যটি প্রক্টরই সরিয়েছে। আরও কিছুক্ষণ পর খবর পাই যে ভাস্কর্যের ভাঙাচুরা অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পড়ে রয়েছে। তারপরে তো আমরা নিশ্চিত হই আমাদের প্রশাসনই এটা ধ্বংস করছে।”