প্রান্তডেস্ক: ভারতের আসামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার দীর্ঘদিন ছিল না। এর জের ধরে সেখানে জন্ম নিয়েছিল ভাষা আন্দোলনের। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ ‘নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ রেল ও ট্রেন অবরোধ করে। আন্দোলন চলাকালে কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই পুলিশ অবরোধকারীদের উপর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। সেখানে ঘটনাস্থলে নিহত হন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী বিপ্লবী নারী সুদেষ্ণা সিংহ। মাতৃভাষায় পাঠদান শুরু হয় এরপর।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে মনিপুরী (বিষ্ণুপ্রিয়া) ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় উঠে আসে বিপ্লবী সুদেষ্ণার এ আত্মত্যাগের কথা। ঢাকাস্থ মণিপুরী সমাজ এর আয়োজনে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, ‘সুদেষ্ণার হপন তেইপাং অক, ইমার ঠার পুনশি পালক’ অর্থাৎ সুদেষ্ণার স্বপ্ন বাস্তব হোক , মায়ের ভাষা দীর্ঘজীবী হোক।

মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা শহীদ দিবসে বিপ্লবী সুদেষ্ণার আত্মত্যাগ দিয়ে আলোচনা সভা

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক ড. রণজিত সিংহ, কবি সৌমিত্র দেব, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির উপ-পরিচালক স্বপন নাথ।

বক্তারা বলেন, বিশ্বের নানা দেশেই ভাষার অধিকারের লড়াই হয়েছে। নানা দেশে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, সেগুলোর কোনটা অহিংস, কোনটা ছিল সহিংস। সুদেষ্ণাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম আদিবাসী ভাষাশহীদ, যিনি মাতৃভাষা স্বীকৃতির আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছেন। পৃথিবীতে এ যাবত দু’জন নারী ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তার মধ্যে সুদেষ্ণা সিংহ একজন।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের মতো সংগ্রামে ঝরেছিল কয়েকটি প্রাণ। এ আন্দোলনের রেষ ধরে আসামে ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ প্রাণত্যাগ করেন বিপ্লবী নারী সুদেষ্ণা সিংহ। 

তাঁর আত্মদানের মধ্য দিয়ে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা অনন্য স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাই ভারত-বাংলাদেশের মণিপুরী সম্প্রদায় এ দিন শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে।