১৯৬৭ সালের ৬ এপ্রিল বাংলার প্রখ্যাত কবিয়াল রমেশ চন্দ্র শীল মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৭৭ সালে তিনি চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনিশ-বিশ শতকে চট্টগ্রামের রমেশ শীল, বরিশালের মুকুন্দ দাস এবং মুর্শিদাবাদের শেখ গুমানী ছিলেন সেকালের প্রখ্যাত কবিয়াল। তিনি ১৯৪৫ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘নিখিল বঙ্গ প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী সম্মেলন’ উপলক্ষে আয়োজিত কবির লড়াইয়ের আসরে শেখ গুমানীকে পরাজিত করে শ্রেষ্ঠ কবিয়ালের মর্যাদা লাভ করেন। তার জীবৎকালে সংঘটিত অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, সূর্যসেনের আত্মাহুতি, দুর্ভিক্ষ, দেশ বিভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, ভাষা আন্দোলন, সামাজিক অবিচার, দুর্নীতি, মহাজনি শোষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি গান বেঁধেছেন এবং সেসব গেয়ে জনগণের মনে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত করেছেন। আগে কবিগান ছিল কেবল চিত্তবিনোদনের মাধ্যম, কিন্তু রমেশ শীল একে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করেন। এরূপ সংগ্রামী ভূমিকার কারণে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাবরণ করেন এবং ১৯৬২ সালে সরকার কর্র্তৃক মঞ্জুরিকৃত মাসোহারা হারান। রমেশ শীল একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক সাধক মাইজভাণ্ডারির গান রচনা ও তা গেয়ে জনপ্রিয় করে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাইজভাণ্ডারির ধারায় রমেশ শীলের গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ। গানগুলো বিভিন্ন সময়ে আশেকমালা, শান্তিভাণ্ডার, মুক্তির দরবার, নূরে দুনিয়া, জীবনসাথি, সত্যদর্পণ, ভাণ্ডারে মওলা, মানববন্ধু ও এস্কে সিরাজিয়া নয়টি পুস্তকে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি তার সমগ্র রচনাবলি প্রকাশ করেছে।