প্রান্তডেস্ক:বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের পুনর্গঠন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারে নির্বাহী পরিষদ এবং সাধারণ সদস্যদেরকে নিয়ে যখন জরুরি সভার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লাকী ইনামসহ একটি অংশ, তখন সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত অপর একটি অংশ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঝুনা চৌধুরীসহ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তাদেরকে না জানিয়ে প্রস্তুতি কমিটিতে নাম যুক্ত করা হয়েছে। ফেডারেশানের সম্মেলন প্রস্তুতির একটি চিঠিকে ঘিরে নির্বাহী কমিটির অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ।
তবে চিঠির বিষয়ে ফেডারেশানের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা বলছেন, এটি খসড়া চিঠি এবং নির্বাহী কমিটির অভ্যন্তরীন বিষয়। চিঠিটি বাইরে কেন প্রকাশ হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ফেডারেশানের ২৩তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন লোকনাট্য দলের (সিদ্ধেশ্বরী) লিয়াকত আলী লাকী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ঢাকা থিয়েটারের কামাল বায়েজিদ। তিন বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও লাকী নির্বাচন না দিয়ে সাড়ে ছয় বছর ধরে পদ দখলে রাখেন। একই সাথে শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ফেডারেশানের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ‘স্বেচ্ছাচারিতা, অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ তুলে গত বছর সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে লাকীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনেও নামেন থিয়েটারকর্মীরা।
মামুনুর রশীদ, রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আহমেদ ইকবাল হায়দার, মলয় ভৌমিকসহ দেশের অগ্রজ নাট্যজনেরা ফেডারেশনে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু লাকী তাতে কর্ণপাত না করে বরং অগ্রজ নাট্যজনদের নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ফেডারেশনে সংস্কারের ডাক দিয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর দুপুরে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ফেডারেশনের জরুরি সভা ডেকেছেন ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য (কেন্দ্র) লাকী ইনাম। সেই সভায় ফেডারেশন পুনর্গঠন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়টি রাখা হয়েছে আলোচ্যসূচিতে।
এর মাঝেই লাকীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজার সই করা একটি চিঠি থেকে জানা যায়, আগামী মার্চে সম্মেলন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্ববায়ক করা হয়েছে ঝুনা চৌধুরীকে। যুগ্ম আহ্ববায়ক হিসেবে আছেন শাহাদাত হোসেন খান, লাকী ইনাম, মমিন বাবু, সৈয়দ দুলাল, আখতারুজ্জামান। সদস্য-সচিব চন্দন রেজা এবং যুগ্ম সদস্য-সচিব মাসুদ পারভেজ মিজু।
সদস্য হিসেবে আছেন উত্তম কুমার সাহা, রাজ্জাক মুরাদ, মুসলেম উদ্দীন সিকদার লিটন, অনন্ত হিরাসহ বেশ কয়েকজন। তবে ঝুনা চৌধুরীসহ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তাদেরকে না জানিয়ে প্রস্তুতি কমিটিতে নাম যুক্ত করা হয়েছে। ঝুনা চৌধুরী বলেন, “ফেডারেশনে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, সেখানে ঐক্যের জায়গাটি তৈরি করতে আমরা কয়েকজন চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে থাকতে আমি ইচ্ছুক নই।” আখাতারুজ্জামান এবং অনন্ত হিরাও জানিয়েছেন, এই সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা যুক্ত নন।
ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বলেন, “সম্মেলন ঘোষণা করতে হলে তো সভা করতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এরকম কিছুই করা হয়নি। আমি তাদের জানিয়েছি আমার নাম বাদ দিতে। কোনোভাবেই ফেডারেশনের বিভাজন চাই না, ঐক্য চাই।” ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অনন্ত হিরা বলেন, “লিয়াকত আলী লাকী এতদিন স্বেচ্ছাচারীভাবে তার অনুগতদের নিয়ে ফেডারেশন পরিচালনা করেছেন, এখনো তার অনুগতদের নিয়ে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই।”২৫ অক্টোবর লাকী ইনামের ডাকা সভায় আলোচনা করে ফেডারেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান বলেও জানান অনন্ত হিরা।এ বিষয়ে জানতে ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীর ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।