দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন: ম্যাখোঁ-ল্যাভরভের ঢাকা সফরে চোখ দিল্লির
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন ম্যাখোঁ। এর মাধ্যমে প্রায় ৩৩ বছর পর ফ্রান্সের কোনও প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করবেন। আর কোনও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসার ঘটনা এবারই প্রথম। এর মধ্যে দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারত সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ।
দ্য হিন্দু বলছে, গণতান্ত্রিক অধঃপতনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে না গিয়ে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর দিকে ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রোসাটম রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ল্যাভরভের আসন্ন সফর আশা জাগিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ হয়তো শিগগির সম্পন্ন হবে। রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের চুক্তিটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম চুক্তি। এর প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়নই করছে রাশিয়া।তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়া। ফলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। আশা করা হচ্ছে, ঢাকা সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন এবং তারা তৃতীয় মুদ্রায় কিস্তি পরিশোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশের জন্যই রাশিয়াকে মার্কিন ডলারে অর্থ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ল্যাভরভের ঢাকা সফর গভীরভাবে নজর রাখা হচ্ছে। কারণ এই সফরে বেশ কিছু আর্থিক ও ভূরাজনৈতিক প্রবণতা প্রতিফলিত হতে পারে।দ্য হিন্দু জানিয়েছে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি পৌঁছাবেন শেখ হাসিনা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে পারেন। তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে স্বাগত জানাতে দেশে ফেরার তাড়া রয়েছে তার। সে কারণে এবার হয়তো আজমির শরীফ পরিদর্শনে যেতে পারবেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালে প্যারিসে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ। তারপর থেকে উভয় দেশ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্যারিস ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার কৌশলগত অবস্থান জোরদারে মনোনিবেশ করেছে এবং ঢাকার সঙ্গে প্যারিসের সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন দৃষ্টিসীমার মধ্যে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার যে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, সে বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ দেবে ম্যাখোঁর ঢাকা সফর।
প্রসঙ্গত, ঢাকার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৭শ শতাব্দীতেও ঢাকায় বাণিজ্য মিশন ছিল প্যারিসের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটি ফ্রান্স। তবে বাংলাদেশ সফর করা সর্বশেষ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড। ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।