স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আরেক নাম সেলিম-দেলোয়ার
প্রান্তডেস্ক: স্বৈরাচার শাসন বিরোধী আন্দোলন তখন চরমে। ১৯৮৪ সাল। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে উঠে পড়েছিল স্বৈরাচারের ট্রাক। তাতে নিহত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রনেতা এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেন।
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ৩৯তম ‘শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস’। এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। আর কাজী দেলোয়ার হোসেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৪ সালের উপজেলা নির্বাচনের ডাক দেয় স্বৈরাচার এরশাদ সরকার। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উপজেলা নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
তুমুল আন্দোলনে রাজপথ উত্তাল করে তোলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয় থেকে বিশাল মিছিল বের হয়ে ফুলবাড়িয়া হয়ে গুলিস্তানের দিকে এগুতে থাকে। মিছিলটি ফুলবাড়িয়া পৌঁছানোর পরপরই বর্তমান ফায়ার ব্রিগেড অফিসের পাশ থেকে পুলিশের একটি ট্রাক অতর্কিতে পেছন থেকে মিছিলের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন সেলিম ও দেলোয়ার। সেদিন এ দুই ছাত্রনেতা ছিলেন মিছিলের পেছন দিকে। ছয় মাসের কন্যা নুসরাত জাহান ডরোথিকে স্বৈরাচারের ট্রাকের নিচে জীবন দেন সেলিম। শহীদ কাজী দেলোয়ার হোসেনের পরিবারকে সান্তনা ও সমবেদনা জানাতে ঘটনার দুইদিন পরই ভান্ডারিয়াতে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের ট্রাক তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
এ ঘটনায় এরাশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি আরও গতি লাভ করে। সেলিম-দেলোয়ারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা দেশে ইতিমধ্যে দেওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ তীব্র আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতা-শ্রমিক বেশির ভাগ জায়গাতেই ১ মার্চের হরতাল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করে। আদমজীতে শ্রমিকদের হরতাল পালনের সময় নিহত হন শ্রমিকনেতা তাজুল ইসলাম।
সেলিম, দেলোয়ার ও তাজুলদের আত্মত্যাগের পথ ধরে দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক দলগুলো সেদিন তিন জোটের রূপরেখা দিয়ে গণতন্ত্রকে সংহত এবং স্বৈরাচারকে চিরতরে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই সেলিম-দেলোয়ার হত্যার বিচার হয় না। তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখার কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। যে সড়কে তারা প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই সড়কের নাম সেলিম-দেলোয়ারের নামে করার দাবি উঠলেও সেটাও আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। আমরা এখন আর কেউ সেলিম-দেলোয়ারের আত্মত্যাগের কথা মনে রাখি না। যাদের আত্মত্যাগের উপর আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো, তাদের ত্যাগ আর অর্জনগুলোর কথা আমরা এতো জলদি ভুলে গেলে কি জাতি হিসেবে আমাদের মাথা একটু হেঁট হয়ে যায় না?(সৌজন্যে :বাংলা ইনসাইডার)