‘সে বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়ে একটু ভালো’

প্রান্তডেস্ক:সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে তাকে নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক ফেসবুক পোস্ট করেছেন আরেক স্বনামধন্য অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন। তিনি নূরের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন- মঞ্চে, টেলিভিশনে এই মানুষটার অভিনয় দেখলেই দীর্ঘ সময় ধরে ভাবতে হয়েছে, কীভাবে এত স্বাভাবিকতা বজায় রেখে উনি দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারেন! তার আবৃত্তি যখনই শোনার সুযোগ হয়েছে, শোনার পর অনেকটা সময় ধরে মনে হয়েছে, এমন ঘোরে ফেলে দেয়ার দক্ষতা কি অনেক চেষ্টায় অর্জন করা নাকি কিছু মানুষ পুরস্কৃত হয়ে জগতে আসেন, উনি তেমনদেরই একজন। নূর ভাইয়ের উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বরে রয়েছে এমন এক মাধুর্য, যা সুবাসের মতো। নীরবে, নিঃশব্দে তা অনুভবকে আলিঙ্গন করে। তার শিল্পীসত্তার পরিচয় কারও জানা না থাকলেও মানুষটার কোমল ব্যক্তিত্বের আকর্ষণ এড়ানো খুব সহজ নয়। যখন বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়েছি, নতুনত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সময়ের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য নেশাগ্রস্তের মতো রাত-দিন একাকার করে ফেলেছিলাম। সে কঠিন ও মুখর সময়টাতে দর্শকের কাছ থেকে যা পাওয়ার, পাওয়া হয়েছিল পূর্ণমাত্রায়। সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না বহুজাতিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। তারা কেউই ভরসা করতে পারছিলেন না। ভাবতেন, এ দেশে উন্নতমানের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এই ভরসাহীন ভাবনা ভেঙে দিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি দায়িত্ব নিয়ে সে-ই প্রথম আন্তর্জাতিক একটা পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের দায়িত্ব আমাকে দিয়ে বলেছিলেন, সম্মান যেন থাকে। আমার জ্যেষ্ঠ অভিনেতা তিনি। এই আমাদের পরিচয় ও সম্পর্ক। তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের, আমি ঢাকা থিয়েটারের- এই আর এক পরিচয় ও সম্পর্ক। তিনি দেশের বড় একটা বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের কর্তা, আমি একই ক্ষেত্রে শক্ত ভিত্তি তৈরির জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছি- এ দুই পরিচয়ের মধ্যে অনেক দূরত্ব কিন্তু যখন ভালো কাজ করতে পারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কেউ একজন কারও প্রতি হাত বাড়িয়ে দেন- তা সামান্য থেকে হঠাৎ মনে রাখার মতো সম্পর্কে উন্নীত হয়। আফজাল আরও বলেন, নূর ভাই বেঁচে আছেন। সে বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়ে একটু ভালো। মৃত্যু থেকে তো কারও ফিরে আসা হয় না। নূর ভাই ফিরবেন, আরও কাছের হয়ে ওঠার সুযোগটা পাবো- এমন আশায় রয়েছি। শুভ জন্মদিন আসাদুজ্জামান নূর, নূর ভাই।

