সেই ঘটনা নিয়ে যা জানালো ইবনে সিনা হাসপাতাল
সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটে অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার রাতে ভাঙচুর, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিবৃতিতে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তানিমকে শুরু থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে পরিবারের সিদ্ধান্তে সিলেটেই চিকিৎসা চালানো হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও দাবি করেছে, রোগীর চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে অভিভাবকদের সব সময় অবগত রাখা হয়েছিল। অথচ কিছু বহিরাগত ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসপাতালে ভাঙচুর ও হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলে। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ বিবৃতি দেন ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস (ডি.এম.এস) কর্ণেল ডাঃ রুকনুল ইসলাম চৌধুরী (অবঃ)।
বিবৃতিতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো। এতে বলা হয়েছে, “গত ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং সিলেট এয়ারপোর্ট রোডে সংঘটিত ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। অপর একজন তামিম আহমেদ (২০) এর ডান উরুর হাড় ও ডান বাহুর উভয় হাড় ভেঙ্গে এবং মাল্টিপল অর্গান (Polytrauma) ক্ষতিগ্রস্থ হলে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রোগী গুরুতর আহত হওয়ায় তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। রোগীকে আইসিইউ-তে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম চিকিৎসা প্রদান করেন। চিকিৎসা চলাকালীন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় প্রথম দিকেই আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয় (চিকিৎসকগণ বারবার রোগীর অভিভাবকদেরকে সার্বিক বিষয়ে কাউন্সিলিং করেন)। তবে রোগীর অভিভাবকগণ ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দুঃখজনকভাবে উক্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং রাতে মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। উল্লেখ্য যে, সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর বৈধ অভিভাবকগণ সব সময় সম্যক অবগত ছিলেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উক্ত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বহিরাগত কিছু লোক হাসপাতালে ভাংচুর, স্টাফদের মারপিট ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটানোর মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা মনেকরি কোন একটি গোষ্ঠী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উক্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন। সেই সাথে সত্যতা যাচাই না করে কিছুকিছু সামাজিক প্রচার মাধ্যম ও অনলাইন পোর্টাল ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচার করেন। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে, এই সমস্ত তথ্য ভিত্তিহীন, অপপ্রচার ও বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই।
আমরা সামাজিক প্রচার মাধ্যম, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ করছি যে, কোনো তথ্য গ্রহণ বা প্রচারের আগে হাসপাতালের অফিসিয়াল সোর্স বা অনুমোদিত মাধ্যম থেকে নিশ্চিত হোন। ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে রোগী ও জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও হাসপাতালের মান ক্ষুন্ন হতে পারে। যা দায়িত্বহীন, অনৈতিক ও দুঃখজনক।
ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেড সবসময় রোগীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বদা উন্নত মানের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে রোগীর সেবা প্রদান করে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে যে, ভবিষ্যতেও আমাদের সেবার মান ও রোগীর কল্যাণকে অটল রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে চিকিৎসা প্রদান অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের লক্ষ্য সর্বদা নিরাপদ, মানসম্মত এবং স্বচ্ছ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। রোগী ও জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখা আমাদের অগ্রাধিকারের অংশ।”
উল্লেখ্য, নগরীর সোবহানীঘাটে অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে ভাঙচুর, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহতের পাঁচ স্বজন আহত হন। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নিহতের পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট বিমানবন্দর সড়কে ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলসাইন্দ মোকামটিলার যুবক তানিম আহমেদ (২০)। তার ডান উরু ও বাহুর হাড় ভেঙে যায় এবং একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমে তাকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় ১২ দিন আগে তাকে ইবনে সিনার আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তানিমের স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের অবহেলা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে তারা হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর ও হামলার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতালের কর্মচারীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে নিহতের কয়েক স্বজন আহত হন এবং পরে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


