মৌলভীবাজারের ছাত্রদল নেতাকে গলা কেটে হত্যা করে ‘আপন ছোট ভাই’

পুলিশ জানায়, আলোচিত এ হত্যা ঘটনার পরপরই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।পুলিশ গোপন সোর্স, তথ্য প্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাইকে (১৬) ঘটনার দিনই (৯ আগস্ট) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশেপাশের মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত অনুমানিক ৮ টায় তার বড় ভাই নিহত রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়। রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করে। এই ঘটনায় বড় ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রানা। পরের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ছোট ভাই দেখে তার মা বাড়িতে নাই। বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় সেদিন রাফির ঘরের দরজাও খোলা রেখেই রাফি ঘুমিয়ে ছিল।
এ সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় বড় ভাই রাফিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর ওই কিশোর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিস্কার করে পুণরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়। ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে।
তবে পুলিশ জানায়, শুধু ৫০০ টাকা প্রদান না করাই এ হত্যাকান্ডের একমাত্র কারণ নয়। নিহত রাফির বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে। কিন্তু ছোট ছেলে পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিল। চার বছর আগে রাফিদের বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই হিসেবে রাফিই ছিল ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চাইতো তার ছোট ভাই বাড়িতে না থেকে মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদ্রাসা না থেকে বাড়িতেই বেশী থাকত। এসব কারনে অভিভাবক হিসেবে বড় ভাই রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করত। কিন্তু বড় ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া নিহত রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সাথে রাফির মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়নও ছিল। প্রায়ই দেবর-ভাবী এবং ভাইয়ের সাথে পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করতো। এসব নিয়ে বড় ভাইয়ের উপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে ছোট ভাইয়ের।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার ঘরের খাটের নিচ থেকে তার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে।
আলোচিত এ হত্যকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ১০ আগস্ট একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

