বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার ঠেকাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ‘খোকন’
ছবি: সংগৃহীত
অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু খোকনকে বললেন, এখন থেকে তোর দায়িত্ব ধানমন্ডিতে যারা আমরা বাঙালিরা বসবাস করি তাদের অবাঙালি বা পাকিস্তানিরা যাতে কোন ক্ষতি করতে না পারে তুই খেয়াল রাখবি। কোথায় কী হয় মনিটরিং করবি আমাকে খবরাখবর জানাবি। আর লিডারের এই নির্দেশনা পালনের খবরটি পাড়ার খোকনের বন্ধু-বান্ধব সবাই জানতেন। তাই ২৫ মার্চ ৭১-এ সন্ধ্যার পর থেকেই ঐ ধানমন্ডিতে খোকনের ব্যস্ততা ঘিরে বন্ধুরা ভাবছিলেন কী ঘটতে যাচ্ছে রাতে। খোকন কেন বারবার ৩২ নাম্বারের দিকে যাচ্ছে আবার অন্য রাস্তায় ফিরে আসছে? এমন নানান শঙ্কা নিয়েই বন্ধুরা রাতে যার যার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাত যত বাড়ছে ততই যেন বিপদের আশঙ্কা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাস্তায় নামছে। সবার আশঙ্কা সেনারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করতে পারে। রাত ১১টার পর থেকেই রাস্তায় গোলাগুলির শব্দ।
চারদিকেই সুনসান নীরবতায় শুধু গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। ধানমন্ডির বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করলেন। এর মধ্যে কারফিউ জারির ঘোষণা। সকালেই ধানমন্ডির বাসিন্দারা জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধু বাড়িতে নেই। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করল কিনা এটাই ধানমন্ডির বাসিন্দারা কেউ নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। ঐ রাতে ৭ নাম্বার রোডের খোকনের পরিবারের কারো ঘুম ছিল না। কারণ খোকন তো ঘরে ফিরেনি। সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাত পার করলেন। পরে পাওয়া যায় এ তরুণ খেলোয়াড়ের লাশ। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন শহিদ খোকনের বোন তাহমিনা খান ডলি। জানান, বঙ্গবন্ধু নিজেই জানিয়ে ছিলেন কীভাবে মারা গিয়েছিল খোকন।
ডলি বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু সেখানেই খোকন, হয়তো বক্তৃতা শুনবে পিছে আর না হয় সঙ্গে সঙ্গে যাবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আপনার ছেলে খোকনকে তো আমি বাঁচাতে পারলাম না, আমার বুকেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলল’ এরপর মায়ের হাত ধরে তিনি কেঁদে ফেলেছিল।
এছাড়া বর্তমানে ধানমন্ডির ৪ নাম্বার রোডে বসবাসকারী ৭০ বছরের প্রবীণ ইয়াহিয়া মোহাম্মদ সেই ২৫ মার্চ রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, খোকন আমার ছোট ভাই প্রয়াত ইয়াকুবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও আমরা খেলাধুলা একসঙ্গেই করতাম। খোকন একজন দক্ষ সংগঠক ও ফুটবল খেলোয়াড় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বঙ্গবন্ধু ভক্ত ছিলেন। আমরা জানতে পারি ঐ রাতে খোকন জিপ চালিয়ে কলাবাগান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের বাসায় গিয়ে তার গাড়িটি রাখেন এবং তাকে ছাড়া কাউকে যেন গাড়িটি না দেওয়া হয় এই কথা বলেন, এ সময় ঐ বাসার ভাড়াটিয়া দেওয়ান লুতফুর রহমানের ছেলে দেওয়ান আজিজুর রহমানকে বললেন, ৩২ নাম্বারে লিডার একা আমাকে সেখানে যেতেই হবে, এ সময় ওরা নিষেধ করে ৩২এ যেতে যে পাকিস্তানি সেনারা রাস্তায় নেমে গেছে গুলি করছে। কিন্তু খোকনের একটি ডায়লগ-লিডার একা আমাকে যেতেই হবে এই বলেই খোকন বের হয়ে যায়। আর ফিরে আসেনি। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ইয়াহিয়া মোহাম্মদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা পরে ডিএল সাহেব ও তার ছেলেদের কাছ থেকে এ ঘটনা জানতে পারি।(সৌজন্যে:দৈনিক ইত্তেফাক)


