জঙ্গি দমনে যা করতে চায় পুলিশ
প্রান্তডেস্ক: জঙ্গি ও উগ্রবাদ দমনে বিশেষায়িত ইউনিটগুলো ছাড়াও এখন নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের কাজে লাগাতে চায় সরকার। এর সঙ্গে বিট পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সারা দেশে থানা ও বিট পুলিশকে জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে সংস্থাটি গড়ে তুলেছে দুটি গবেষণা সেল। যে সেল থেকে ইতোমধ্যে জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়েছে।
দেশে জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাউন্টার টেরোরিজম নামের একটি ইউনিট কাজ করে। তবে জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে গৃহীত পুরো কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট।
পুলিশের মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থানা পুলিশ। আরও প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে বিট পুলিশ। যাদের বিচরণ ইউনিয়ন কিংবা গ্রাম পর্যায়ে। আবার তাদের সঙ্গে কাজ করেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা। জঙ্গিবাদ নিয়ে মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে সেগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রতিরোধ ও দমনেও কাজ করতে পারেন পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য। সে লক্ষ্যে পুলিশের এসব সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
তারা বলেন, বিট পুলিশিং ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়া অনেক প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানে পুলিশের যেতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। যে কারণে আইনশৃঙ্খলাজনিত বড় ধরনের কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হলে পুলিশও সেসব দূরবর্তী এলাকায় টহলে যেতে চান না। আর এ সুযোগে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশের সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে প্রশিক্ষণ থাকলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে এটিইউ’র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রেনিং ও মিডিয়া উইং) ওয়াহিদা পারভীন বলেন, বিট পুলিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে। বিট পুলিশের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফোরামে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে কথা বলেন ও মতামত দেন। তাই তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এটিইউ। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কর্মকর্তাগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে চরমপন্থা প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কার্যক্রমে ফোকাল পার্সন হিসেবে কাজ করবেন। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনও ইস্যু তৈরি হলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে এটিইউকে রিপোর্ট করতে হবে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এটিইউর পুলিশ সুপার (ট্রেনিং) শিরিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে জোরেশোরে কাজ চলছে। জঙ্গি ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় পুলিশ ‘ভালো অভ্যাস’ অনুসরণ করে দুই ধরনের প্রস্তাব (অ্যাপ্রোচে) নিয়ে কাজ করছে। এরমধ্যে ‘কঠিন প্রস্তাব বা হার্ড অ্যাপ্রোচ’ জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়। আর ‘সাধারণ প্রস্তাব বা সফট অ্যাপ্রোচ’ হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নাই।
গত বছর (২০২২) সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ৪২টি অভিযান চালিয়েছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এসব অভিযানে ৪৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ২৭টি। এ বছরও (২০২৩) বেশ কজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিবাদ একটি স্থায়ী ও বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর সমাধানের পথও স্থায়ীভাবে নিতে হবে। শুধু গ্রেফতার করেই জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়। সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতাও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অন্যতম সহায়ক হবে।

