দিঘির পানি ছিল রক্তের মতো লাল

প্রান্তডেস্ক:ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র সিকি মাইল দক্ষিণে ‘খুনিয়া দিঘি’। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম বর্বরতার সাক্ষী এ বধ্যভূমি। কেবল জেলার নয়, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বর্বরতার সাক্ষী এটি। ৬ একর আয়তনের খুনিয়া দিঘি প্রায় ২০০ বছর আগে স্থানীয় কোনো জমিদার খনন করেছিলেন। পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর উপজেলার নিরীহ লোকদের ধরে এনে খুনিয়া দিঘির পাড়ে একটি শিমুল গাছের সঙ্গে প্রথমে হাতের তালুতে পেরেক মেরে তাদের ঝুলিয়ে রাখত। মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে তাদের ওপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। পরে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দিত এই খুনিয়া দিঘির পানিতে। এভাবে কয়েক হাজার মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে খুনিয়া দিঘিতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন এ দিঘির পানি ছিল রক্তের মতো লাল।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই পাকহানাদারদের সেই রোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে শিউরে ওঠেন স্থানীয় মানুষ। সে সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ নারী-পুরুষদের ধরে এনে দিঘির পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করত হানাদার বাহিনী। তাদের দোসর রাজাকাররা লাশগুলো ভাসিয়ে দিত দিঘির পানিতে। সেখানেই লাশগুলো পচে-গলে পানির সঙ্গে মিশে যেত। হাজারো লাশ আর রক্তে দিঘির পানির রং সব সময়ই থাকত লাল।
শুধু তাই নয়, পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এলাকার তরুণী ও সুন্দরী নারীদের পিতা-মাতা এবং স্বামীর উপস্থিতিতেই ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রেখে চালাত পাশবিক নির্যাতন। সেই স্মৃতি ভাবলে আজও শিউরে ওঠেন সেখানকার মানুষ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানি সেনারা আমার ভাই নজরুল ইসলামকে ধরে এনে এই খুনিয়া দিঘিতেই হত্যা করেছে। ক্যাম্পে আটকে রেখে ওরা সুন্দরী নারীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাত। এতে অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীনের পর তাদের অনেকের কোলে জন্ম নেয় পিতৃ পরিচয়হীন অনেক সন্তান।
খুনিয়া দিঘির পাড়ে পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের নীরব সাক্ষী সেই শিমুল গাছটি এখন ডালপালা বিস্তার করে বিরাট আকার ধারণ করেছে। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে ওই পুকুরপাড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম জানান, শুনেছি প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে তোপধ্বনির পর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় খুনিয়া দিঘির শহীদদের। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়োজনে এখানে জাতীয় পর্যায়ের স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হবে।(সৌজন্যে:দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন)

