মাটির আবরণে সংরক্ষিত ছিল ডাইনোসরের দেহ

প্রান্তডেস্ক:বিজ্ঞানীরা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের এক ডাইনোসরের নিখুঁত দেহের ছাপ আবিষ্কার করেছেন। এতো দিন যেটিকে ‘ডাইনোসর মামি’ বা সংরক্ষিত চামড়া বলে মনে করা হতো, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে সেটি আসলে মাটির তৈরি এক পাতলা আবরণ।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ড. পল সেরেনো বলেন, তারা ল্যান্স গঠনে পাওয়া দুইটি ‘এডমন্টোসরাস’ নামের ডাইনোসরের জীবাশ্ম পরীক্ষা করেছেন। একটির বয়স ছিল প্রায় দুই বছর, অন্যটি তরুণ পূর্ণবয়স্ক। আধুনিক প্রযুক্তি—যেমন সিটি স্ক্যান, ত্রি-মাত্রিক চিত্রায়ণ, এক্স-রে ও ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে তারা পরীক্ষা করে দেখেন, কোনো নরম টিস্যু বা চামড়ার আসল অংশ অবশিষ্ট নেই। বরং ডাইনোসরের দেহের উপরে একদম পাতলা, এক শতাংশ ইঞ্চিরও কম পুরু মাটির স্তর তৈরি হয়েছিল।
এই মাটির স্তরটি প্রাণীর চামড়ার ওপর পড়ে শক্ত হয়ে তার সূক্ষ্ম দাগ, আঁশ ও ভাঁজের নিখুঁত ছাপ ধরে রেখেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি অনেকটা মাটিতে তৈরি মুখোশের মতো—যা আসল চামড়া নয়, কিন্তু দেখতে হুবহু চামড়ার মতো।
গবেষণায় জানা গেছে, তখনকার যুগে (ক্রিটেশিয়াস পর্বে) ওই অঞ্চলের আবহাওয়া ছিল খরাপ্রবণ। খরার কারণে প্রাণীগুলো মারা যেত এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেহ শুকিয়ে যেত। পরে আকস্মিক বন্যায় মৃতদেহগুলো মাটির নীচে চাপা পড়ে যেত। এ সময় পচে যাওয়া চামড়ার উপর ব্যাকটেরিয়ার স্তর তৈরি হতো, যা চারপাশের মাটির ক্ষুদ্র কণাকে আকর্ষণ করে গায়ে আটকে দিত। এভাবেই তৈরি হয়েছিল সেই পাতলা মাটির আবরণ, যা হাজার হাজার বছর পরও দেহের গঠন ও চামড়ার নকশা সংরক্ষণ করে রেখেছে।
অন্য এক বিশেষজ্ঞ, ড. অ্যান্থনি মার্টিন বলেন, মাটির খনিজ পদার্থ জীবজ পৃষ্ঠে সহজেই লেগে থাকে এবং সেই পৃষ্ঠের নিখুঁত ছাঁচ তৈরি করে। তাই এত সুন্দরভাবে ডাইনোসরের আঁশ, কাঁটা ও খুরের ছাপ সংরক্ষিত হয়েছে।
এই গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন কীভাবে ডাইনোসরের এই ধরনের নিখুঁত জীবাশ্ম তৈরি হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে এমন নমুনা কোথায় পাওয়া যেতে পারে।

