কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার’র মহাপ্রয়াণ দিবসআজ

৩০ আগস্ট ২০১৭ না ফেলার দেশে চলেন যান এই শিল্পী।
প্রান্তডেস্ক:স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার। দেশাত্মবোধ জাগ্রত করা তার গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আজ এই মহান শিল্পীর প্রয়াণ দিবস। ২০১৭ সালের এই দিনে তিনি চিরবিদায় নেন।
তার সহযোদ্ধা শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আব্দুল জব্বারের দরদী কণ্ঠ শুধু শ্রোতাদেরই নয়, আমাকে পর্যন্ত মোহিত করত। বয়সে কিছুটা বড় হলেও আমাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। বাংলাদেশ বেতারে আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি আড্ডায়, গানে। তার কণ্ঠে সবসময়ই ছিল এক অন্য রকম আবেদন।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সংগীত, নৃত্য ও নাট্যশিল্পীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ’। সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার। স্বাধীন বাংলা বেতারে তার গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ কিংবা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানগুলো আজও মুক্তির সুর হয়ে বাজে। শুধু দেশাত্মবোধক গান নয়, ভালোবাসার গানেও তার কণ্ঠ ছুঁয়ে যেত শ্রোতার অন্তর।
১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া আব্দুল জব্বার ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৬২ সালে। এরপর একে একে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন তিনি। বিশেষ করে ১৯৬৮ সালের ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ তাকে এনে দেয় বিশেষ পরিচিতি। এর পর ‘পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি’, ‘সুচরিতা যেওনাকো’ এবং ১৯৭৮ সালের কালজয়ী গান ‘ও রে নীল দরিয়া’ তাকে পৌঁছে দেয় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার কণ্ঠের গান অনেককে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। যুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখেন তিনি; বিশেষ করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ে আয়োজিত কনসার্টে।
তার গাওয়া তিনটি গান-‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এবং ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার জরিপে সহস্রাব্দের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় স্থান পায়।
অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-এর আজীবন সম্মাননা (২০১১) ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।
আব্দুল জব্বার কেবল একজন কণ্ঠশিল্পীই নন, তিনি ছিলেন মুক্তির সুরের এক অনন্য যোদ্ধা। তার গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাঙালির সাহস, ভালোবাসা ও মুক্তির চেতনার বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে।

