১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন কবি ও সাংবাদিক আহসান হাবীব। তিনি ১৯১৭ সালে পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিরোজপুর থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পাস করে কিছুদিন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে আইএ ক্লাসে পড়াশোনা করেন তিনি। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে কলকাতা যান এবং সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। কলকাতায় তিনি তকবীর, বুলবুল ও সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকায় এসে বিভিন্ন সময় আজাদ, মোহাম্মদী, কৃষক, ইত্তেহাদ ইত্যাদি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। পরে কিছুদিন দৈনিক পাকিস্তানে কাজ করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আহসান হাবীব আধুনিক কাব্যধারার কবি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তার প্রথম প্রবন্ধ ‘ধর্ম’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রথম কবিতা ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’ ছাপা হয় পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে। তার প্রথম কবিতার বই ‘রাত্রিশেষ’ ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ : ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাব, দু’হাতে দুই আদিম পাথর, প্রেমের কবিতা, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ ইত্যাদি। এ ছাড়া দুটি উপন্যাস : অরণ্য নীলিমা ও রাণীখালের সাঁকো, শিশুতোষ গ্রন্থ : জ্যোৎস্না রাতের গল্প, বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, ছুটির দিনদুপুরে ইত্যাদি। মধ্যবিত্তের সংকট ও জীবনযন্ত্রণা আহসান হাবীবের কবিতার মূল বিষয়। তার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গিতে রয়েছে নাগরিক মননের ছাপ। সাহিত্যসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ইউনেসকো সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার লাভ করেন।