কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে রবীন্দ্র-উত্তর সাহিত্যে বাংলা কবিতার নতুন ধারার সূচনাকারী হিসেবে সমাদৃত পাঁচ কবির অন্যতম সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন সেকালের বিশিষ্ট দার্শনিক। সুধীন্দ্রনাথ ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাশীর থিওসফিক্যাল হাইস্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯১৮) এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ (১৯২০) ও বিএ (১৯২২) পাস করেন। এরপর তিনি কিছুদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। এখানকার পাঠ অসমাপ্ত রেখেই তিনি ‘কলকাতা ল’ কলেজ’-এ আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, কিন্তু তাও সমাপ্ত করেননি। পিতার ল’ ফার্মে শিক্ষানবিশ হিসেবে সুধীন্দ্রনাথ কর্মজীবন শুরু করেন। সুধীন্দ্রনাথ ১৯২৪ সালে ছবি বসুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু এক বছরের ভেতরেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ১৯৪৩ সালে প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রাজেশ্বরী বসুর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৩১ সাল থেকে দীর্ঘ বারো বছর তিনি পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৫-৪৯ সালে স্টেটসম্যান পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৭-১৯৫৯ সালে আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং পরে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। আধুনিক মনন ও বৈশ্বিক চেতনার কারণে তিনি বাংলা কাব্যে স্বতন্ত্র স্থান লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : কাব্য তন্বী, অর্কেস্ট্রা, ক্রন্দসী, উত্তরফাল্গুনী, সংবর্ত, দশমী। গদ্যগ্রন্থ : স্বগত, কুলায় ও কালপুরুষ। প্রতিধ্বনি নামে তার একটি অনুবাদগ্রন্থও আছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, মননশীলতা ও নাগরিক বৈদগ্ধ তার কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলা কবিতায় তিনি আধুনিক দর্শনচিন্তার নান্দনিক প্রকাশ ঘটান। বাংলা গদ্যের আধুনিক রূপান্তরেও তার অবদান রয়েছে।