ট্রাম্পের ইরান হামলার পর তিনটি বড় অনিশ্চয়তা

প্রান্তডেস্ক:প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে তিনটি পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করে তিনি ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ অর্জন করেছেন। তবে এই সাফল্যের দাবির সত্যতা যাচাই করা এখনো বাকি। এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে—এই হামলা কি আমেরিকাকে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়াবে?
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পুরোনো হুঁশিয়ারি আবার আলোচনায় এসেছে—‘যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে এই সংঘাতে নামে, তাহলে তারা যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান পাল্টা হামলায় যেতে পারে। তারা আমেরিকান ঘাঁটিতে, দূতাবাসে অথবা সমুদ্রপথে আক্রমণ চালাতে পারে। এমনকি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে। এই প্রণালি দিয়ে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ তেল পরিবহন হয়।
ইতিহাস বলছে, ইরান ১৯৮৮ সালে একটি মাইন দিয়ে আমেরিকার ইউএসএস স্যামুয়েল বি. রবার্টস যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। ২০২০ সালে সোলাইমানিকে হত্যার জবাবে ইরান ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল এবং ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমান ভুল করে ভূপাতিত করেছিল। এবার প্রতিক্রিয়া আরও জোরালো হতে পারে।
দ্বিতীয় অনিশ্চয়তা হলো, এই হামলা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে পেরেছে, না কি উল্টো গতি এনে দিয়েছে। ফোরদোর মতো পাহাড়ের নিচে থাকা স্থাপনাগুলো আসলে ধ্বংস হয়েছে কি না, তা এখনো অস্পষ্ট। অতীতে অনেকে বলেছিলেন, এমন ‘বাংকার বাস্টার’ বোমাও এই ঘাঁটি ধ্বংসে যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে ইরান আগেই এত পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই হামলা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে, কারণ তারা বুঝতে পারে—পরমাণু অস্ত্র থাকলে এ ধরনের হামলা এড়ানো সম্ভব।
তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা হলো, এটি কি সংঘাতের শেষ, না কি নতুন এক যুদ্ধের শুরু? ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মনে করেন, এই হামলা ইরান সরকার ও পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করবে। অথচ ইরাক যুদ্ধের সময়ও তিনি একই কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাতে ইরান বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ইরানের সরকার বিরোধীরাও বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপ পছন্দ করছে না। নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী নারগেস মোহাম্মদি বোমা হামলার নিন্দা করে ট্রাম্পকে তা বন্ধ করতে অনুরোধ করেছেন।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান বলেন, ‘আমরা সবাই একমত যে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়। কিন্তু ট্রাম্প কূটনৈতিক পথ ছেড়ে দিয়েছেন এবং এমন কিছু করেছেন যা অপ্রয়োজনে আমেরিকান নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্পের দাবি ও ভাষণ বিজয়ের মতো শোনালেও বাস্তবতা হলো, সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করতে পারে।(সূত্র: প্রথম আলো)