আজ ১৪ জুন, আদিত্যপুর গনহত্যা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন, ২০২৫ ১২:১১ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৪১ বার পঠিত

লিখতে গিয়ে ‘গনহত্যার’ সকাল বলেছি আসুন গনহত্যা কি জেনে নেই। ইংরেজি Genocide শব্দের বাংলা অর্থ গনহত্যা। গনহত্যা বলতে বুঝায় ” জাতি, ধর্মিয় গোষ্ঠী, বা বর্ণিয় গোষ্ঠী, কে হত্যার উদ্দেশ্য পরিচালিত হত্যাকান্ড। যার প্রধান অবলম্বন নৃশংস ও পাইকারি হত্যাভিযান”।
গনহত্যা বলতে একটি জাতি, নৃতাত্ত্বিকগোষ্টী, বর্ণগত কিংবা ধর্মিয় গোষ্ঠিকে, আংশিক বা সম্পুর্ন ভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যা কান্ড।
এর আলোকে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে পাক-হানাদার বাহিনী পরিচালিত সকল হত্যা কাণ্ডই গনহত্যা।
কি ঘটেছিলো ৫৪ বছর পূর্বে আদিত্য পুর গ্রামে। সেদিন আদিত্য পুর গ্রামে সংগঠিত হয়েছিল মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ গনহত্যা। যার প্রত্যক্ষ পরোক্ষে উস্কানিদাতা ছিল পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, নামিয় পশু।
সেদিন পাক-হানাদার বাহিনীর দোসররা রাস্তা দেখিয়ে এনেছিল পাক হানাদার বাহিনীকে এই প্রত্যন্ত গ্রামে, স্বাধীনতাকামি নিরীহ জনসাধারণকে হত্যার জন্য।
সেদিনের বর্ননা দিতেগিয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জনাব তাজুল মোহাম্মদ তাঁর ” সিলেটে গনহত্যা” বইয়ে লিখেন ” “সূর্যোদয়ের তখনও ঘন্টা দুই বাকি। রাতের আঁধার কাটতে শুরু করেছে সবে। বালাগঞ্জে উপজেলার আদিত্যপুরের কর্মক্লান্ত মানুষজন গভীর ঘুমে অচেতন চারিদিকে নিরব নিস্তব্ধ। কিন্তু হটাৎ রাতের শেষ প্রহরের নীরবতা ভেদ করে এ কিসের শব্দ ভেসে আসছে? ” ততক্ষণে চারটি সাঁজোয়া গাড়ি বোঝাই পাকসেনা গ্রামে ঢুকে পড়েছে” সব থেকে অবাক করা ব্যাপার! আধাঘন্টার মধ্যেই এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী সারা গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এবং ঘোষণা করে শান্তিকমিটি গঠন আর ডাণ্ডি কার্ড দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা এসেছে।
এ সময় আগে থেকে সেখানে অবস্থান করা পাকবাহিনীর এদেশীয় দোসরদের পরামর্শেই জনৈক ক্যাপ্টেনের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠে সেনাদের সয়ংক্রিয় অস্ত্র। সাথে সাথে লুটিয়ে পড়ে ৬৩ টি তাজা প্রান। অবশ্য এদের মধ্যে দুএক জন মরার মত ভান করে প্রানে রক্ষা পেয়েছিলেন। এদের একজন কঙ্কন সেন, আরেকজন মন্টু সেন। কঙ্কন সেন আজথেকে সাত আট বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন, অপর জন মন্টু সেন কোথায় কিভাবে আচেন কেউ বলতে পারেনা কেউ খবর রাখার প্রয়োজনিয়তা বোধ করেনি।
সেদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের তালিকা
======================================
রাধিকা রঞ্জন সেন —শিক্ষক
শ্রীশ সেন ( নায়েব)
দীনেশ চন্দ্র দেব।
ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব
সুরেশ চন্দ্র দেব
মতিলাল দেব।
সুধীর চন্দ্রদাশ।
বিপুল চন্দ্র দেব।
সুখেন্দ্র সেন
দক্ষিনা দেব।
অতুল আচার্য
নবরশ দাশ
হৃদয় শুক্লবৈদ্য
কৃষ্ণ শীল
দীগেন্দ্র চন্দ্র শীল
যতীন্দ্র দাশ
রাকেশ শব্দকর
সুরেশ শুক্লবৈদ্য
সুধন্য দাশ
ধনাই রাম নমশূদ্র
প্রভাত নমশূদ্র
বলাই নমশূদ্র
মহেন্দ্র নমশূদ্র
ঈশান নমশূদ্র
বলাই নমশূদ্র( ২)
নারায়ণ নমশূদ্র
সতীশ চন্দ্র দাস
দীনেশ দেব
নরেশ ধর
দিগেন দেব
দিনেশ—-মশাখলা
যতিন্দ্র দত্তপুরকায়স্থ—চান্দপুর
খোকন —-তাজপুর
অমর দেব—-সিরাজনগর পঃ
ননী দেব——- ঐ
কলিন শব্দকর —-নিজ বুরুঙ্গা
পরেশ শব্দকর —সহ ৬৩ জন
১৪ জুন ১৯৭১ সালে আদিত্যদপুরের গনহত্যার সকল শহীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
কৃতজ্ঞতা ঃ জনাব তাজুল মোহাম্মদ ও তাঁর বই ” সিলেটে গনহত্যা “।

All reactions:
22