প্রান্তডেস্ক:বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটায়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্থাটির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিলের ঘাটতি রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ডব্লিউএফপির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের অনুরোধক্রমে ২৯ মে কক্সবাজারের টেকনাফে বন্যার সতর্কতা জারির পরপরই সংস্থাটি দ্রুততার সঙ্গে সহায়তা প্রদান শুরু করে। এই উদ্যোগের আওতায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিবারপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফের বাসিন্দা নুরুল বেগম, যিনি এই সহায়তা পেয়েছেন, বলেন, “অতীতের বন্যায় কখনোই এ ধরনের আর্থিক সাহায্য পাইনি। এবার প্রাপ্ত টাকা দিয়ে আমি আমার সন্তানদের জন্য খাদ্য কিনব, ঘর মেরামত করব এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয়ও করতে পারব। ডব্লিউএফপির এই উদ্যোগের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”
ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ বিষয়ক কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেলি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ সবসময়ই দরিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আমাদের আগাম পদক্ষেপের ফলে এসব পরিবার দুর্যোগ মোকাবিলায় কিছুটা প্রস্তুতি নিতে পেরেছে।”
২০২৫ সালের জন্য ডব্লিউএফপি চারটি স্তরবিশিষ্ট একটি জরুরি প্রস্তুতি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতে রয়েছে দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি, দুর্যোগ-পরবর্তী খাদ্য সহায়তা, আর্থিক অনুদান প্রদান এবং নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৬০ লাখেরও বেশি দুর্যোগপ্রবণ মানুষকে সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বেশিরভাগই এখনো অনিশ্চিত। ডম স্ক্যালপেলি সতর্ক করে বলেন, ‘এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় ও সম্পদ অত্যন্ত সীমিত। আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি জোরালো আবেদন জানাচ্ছি, যেন তারা দ্রুততার সঙ্গে এবং বৃহৎ পরিসরে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।’
ডব্লিউএফপির এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের দুর্যোগ প্রস্তুতি কাঠামোর একটি অংশ। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে ১৫টির বেশি দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি কাঠামো চালু করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৬-এ পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে, যা বন্যা, ভূমিধস, খরা ও তাপপ্রবাহের মতো বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
এই কার্যক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সহায়তা প্রদান করছে। এদিকে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতেও বন্যা ও ভূমিধসের প্রভাবে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ডব্লিউএফপির তথ্যমতে, প্রায় ৩৩টি শিবির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংস্থাটি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট ও গরম খাবার বিতরণ করছে। এছাড়া, স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টি বিস্কুটের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ২০ লাখ মার্কিন ডলারের জরুরি তহবিল প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।