জুলাইয়ে আহত-কর্মচারীদের সংঘর্ষ: ৪ দিন ধরে বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞানে সেবা, দুর্ভোগে রোগীরা
প্রান্তডেস্ক:ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে টানা চতুর্থ দিনের মতো সেখানে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের প্রধান চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন শত শত রোগী।
বুধবার সংঘর্ষের পর হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরা নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি শুরু করলে জরুরি ও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। শনিবারও দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা ফটকের সামনে এসে ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে।
রাজবাড়ী থেকে আসা কালা চাঁনের মেয়ে হালিমা বেগম বলেন, “ডাক্তার কিছু রিপোর্ট দিয়েছিল, আজ দেখানোর কথা ছিল। ভোরে বের হয়ে এখন এসে দেখি হাসপাতাল বন্ধ। তিনজন মিলে ঢাকা আসতেই গেছে ১৫শ টাকা, আবার ফেরত যাওয়ার খরচও আছে। গরিব মানুষ, এতবার আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।”
ভাসানটেকের আট বছরের শিশু আবদুল্লাহর চোখে বরশি ঢুকে গেলে তাকে নিয়ে স্বজনরা হাসপাতালে আসেন, কিন্তু বন্ধ থাকায় তারা পরে চলে যান ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক কষ্ট করে, টাকা খরচ করে এখানে আসলাম। এখন শুনি হাসপাতাল বন্ধ। আমাদের কষ্ট তো কেউ বুঝবে না।”
নাটোরের হাফিজুর রহমান জানান, তার মেয়ের চোখের অপারেশনের জন্য তারিখ দেওয়া ছিল। “আজকে এসে দেখি তালা মারা। এখন মেয়ের চিকিৎসা হবে কিভাবে? যদি ক্ষতি হয়, দায় কে নেবে?”
হাসপাতালের একজন নারী কর্মচারী বলেন, “জুলাই আহতদের হামলায় আমরা অনেকেই আহত হয়েছি। নিরাপত্তা ছাড়া আমরা কাজ করতে পারি না। তারা স্যারকে জিম্মি করেছে, রেফারেল লিখে দিতে বাধ্য করছে। পুরো হাসপাতাল জিম্মি করে রেখেছে তারা।”
চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামাল বলেন, “দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে। আহতদের তালিকায় যেসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে বাকিরা সেবা দিতে পারেন—এমন প্রস্তাব এসেছে। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছি, আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।”
প্রসঙ্গত, গত রোববার উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে চার জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেন। এরপর মঙ্গলবার তারা হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে অবরুদ্ধ করেন। দেড় ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় তিনি মুক্ত হন। এরপরেই কর্মবিরতিতে যান চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।