আজহারুলের খালাসের প্রতিবাদে ঢাবিতে বামপন্থীদের প্রতিবাদ অব্যাহত
প্রান্তডেস্ক:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিলের রায়ে খালাসের প্রতিবাদে থেমে নেই বামপন্থীদের প্রতিবাদ। রায়ের পরদিন থেকে এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।
এদিকে খালাসের প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও চট্টগ্রাম মহানগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ তুলে শিবিরের বিচারের দাবি তুলেছেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আয়োজনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি তোলা হয়।
শিবিরের বিচারের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, এখনও সময় রয়েছে রাবি ও চট্টগ্রামে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারী শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনুন। যদি আইনানুগ ব্যবস্থা না গ্রহণ করেন, আপনারা আওয়ামী লীগের পরিণতি মনে রাখবেন। মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যাকারীরা কীভাবে রাজনীতি করার অধিকার পায় তারা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে যে যুক্তিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, একই যুক্তিতে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।
এর আগে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে এ টি এম আজহারুলের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে আতাত করে তার বিচার নিশ্চিতে টালবাহানা করেছে। সেই বিচার নিশ্চিতে আমরা শাহবাগে দাঁড়িয়েছিলাম আর আওয়ামী লীগ নানা ট্রাম কার্ড খেলেছিল বিচারকে বাধাগ্রাস্ত করতে। ২০১৪ সালে এটি এম আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হলে, তিনি আপিল করলে পরে ২০১৮ সালে আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। সেটি তো এতোদিনে কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, পরবর্তীতে বিশেষ আইন সুবিধা দেওয়া হয়। এখন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ৩৬০° কোণ ঘুরে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। কোন প্রক্রিয়ায় খালাস পেলেন সেটিও বলা হলে না। এই রায়েই প্রতিবাদে রাতে রাবি আমাদের অপরাপর সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানালে তাদের ওপর ইসলামি ছাত্রশিবির হামলা চালায়, পরদিন চট্টগ্রামে হামলা চালানো হয়। এই শিবিরের হাতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের রক্ত লেগে আসে। পুনরায় তারা তাদের স্বরূপে ফিরে এসেছে।’
পরে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের চারুকলা-শাহবাগ থানা হয়ে ঘুরে এসে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। এ সময় তারা ‘অ তে আজাহার, তুই রাজাকার,’ ‘ছ তে ছাত্রশিবির, জ তে জামায়াতে ইসলাম, তুই রাজাকার, তুই রাজকার-তুই রাজাকার’, ‘আজাহার, শিবির, জামায়াত ইসলামের ঠাঁই না, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, মুগ্ধ-আবু সাঈদের বাংলায়, রাজাকারে ঠাঁই নাই’-সহ নানা স্লোগান দেন।
এদিকে মিনিট ১০-১৫ পরপরই একই দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কর্মসূচি পালন করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ওই প্রতিবাদ সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী এই যুদ্ধাপরাধীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আগস্ট পরবর্তীতে বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপগুলো থাকবে না কিন্তু সেটি না হয়ে আবার বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে বর্বর কায়দায় হামলা চালানো হলো আমরা দেখছি। এই ছাত্রশিবিরের হাত ধরে ফের ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি ফিরে আসার পায়তারা চলছে। আমরা অবিলম্বে এই সন্ত্রাস দখলদারত্বের রাজনীতি বন্ধ হোক এবং সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরে হাসুক।’
এতে অন্যান্যদের মধ্যে ঢাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের মাঈন আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশাসহ আরও অনেকে।
শুক্রবার সকালে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে রাবি ও চট্টগ্রামে শিবিরের হামলার বিচার এবং অফলাইন-অনলাইনে নারীদের ওপর হিংস্র আক্রমণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক স্কাইয়া ইসলাম।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘এসব আক্রমণের বিরুদ্ধে সরকার কোনো আশু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, আমরা সম্মিলিতভাবে তা রুখে দাঁড়াব।’