ফরাসি প্রেসিডেন্টের গালে স্ত্রীর ‘চড়’: বয়সে ২৪ বছরের বড় ব্রিজিতের সঙ্গে মাখোঁর বিয়ের পেছনের সত্যিকার গল্প কী

ব্রিজিত ও এমানুয়েল মাখোঁর গল্পের সবচেয়ে অদ্ভুত দিক হলো, এটি সত্য বলে মনে হয়। ফ্রান্সে অনেক প্রেসিডেন্ট পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। তাই মানুষ সন্দেহের চোখে দেখেছেন, যখন শুনেছেন যে মাখোঁ কিশোর বয়স থেকেই তাঁর স্ত্রীকে একনিষ্ঠভাবে ভালোবেসে এসেছেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন। তবু ব্রিজিত মাখোঁর নতুন জীবনী বলছে, তাঁদের এই ‘অস্বাভাবিক বিবাহ’ ফ্রান্সের রাজনীতিতে সবচেয়ে স্থির দাম্পত্য সম্পর্কগুলোর একটি এবং দেশ আরেকবার এমন এক রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি তাঁর কাজে মনোযোগী।
এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।

এটা সত্য, পারিবারিক সুখ যে পেশাজীবনে সাফল্য আনবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ‘ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন’ (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেলের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচলিত করার মতো বিষয় বা কেলেঙ্কারি প্রেসিডেন্টের পদকে প্রায়ই ভাঁড়ামি বা নাটকীয় রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ তাতে প্রভাবিত হননি।
তবে এর মানে এ নয় যে এতে (ফরাসি প্রেসিডেন্টের) কোনো কেলেঙ্কারি নেই। বোমেলের বইটি সম্প্রতি ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে পাঠকেরা অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, এতে এমন এক ‘সাধারণ প্রেমকাহিনি’ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার শুরুটা ছিল মাখোঁর স্কুলজীবনে। মাখোঁ যে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সেখানেই শিক্ষকতা করতেন ব্রিজিত (ওই সময়ে মাখোঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রী)।
বইটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে থাকা মাখোঁর সঙ্গে যখন ব্রিজিতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। কিশোর বয়সী ছেলের সঙ্গে তাঁকে দেখা যেতে লাগলে স্থানীয় সমাজে অবিশ্বাস ও কানাঘুষা শুরু হয়। তাঁর আত্মীয়স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এ সম্পর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দিতে মাখোঁ যে ধরনের জেদ ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বইটির ৬৩ বছর বয়সী লেখিকা। এ ক্ষেত্রে নানা সামাজিক, আইনগত ও বাস্তবিক বাধা মাখোঁ একে একে অতিক্রম করেছেন।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা (মাখোঁ ও ব্রিজিত) একে অপরের প্রতি অনুগত ছিলেন, যদিও একসঙ্গে থাকতেন না। এই ১০ বছরে মাখোঁর একগুঁয়েমি বোঝা যায়। এটা তাঁর চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য। আপনি তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন, তাঁর এ অটল থাকা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি তাঁকে (ব্রিজিতকে) বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন।

বোমেলের বিশ্বাস, ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের অস্থিরতা, চরম ডানপন্থার পুনরুত্থান ও জনপ্রিয়তা পড়তির মধ্যেও প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজের অবস্থান যেভাবে ধরে রেখেছেন; তার পেছনে ওই একই গুণাবলি কাজ করে থাকতে পারে। প্যারিসের শঁজেলিজের কাছে নেপোলিয়ন হোটেলের কাঠঘেরা একটি রেস্তোরাঁয় আমাদের আলাপকালে বোমেল বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) জানেন তিনি কী চান, যা চান সেটা পান এবং তিনি একজন স্বাধীন মানুষ।’
ব্রিজিত মাখোঁ তাঁর স্বামীর চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড়। তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল আমিয়েঁ শহরের একটি বেসরকারি কলেজে। সেখানে ব্রিজিত ছিলেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক আর মাখোঁ ছাত্র। সে সময় ব্রিজিত বাস করতেন শহরের অভিজাত একটি পাড়ায়। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ব্যবসার জন্য তাঁর পরিবারের নামডাক ছিল। আন্দ্রে-লুঁই ওজিয়ের নামের একজন নামকরা ব্যাংকারের সঙ্গে তখন তিনি বিবাহিত জীবনে ছিলেন; বোমেল যাঁকে ‘নির্ভরযোগ্য, কিন্তু একঘেঁয়ে’ মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেন। তাঁদের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। বোমেল বলেন, ‘আমি মনে করি না, ব্রিজিত তাঁর সঙ্গে অখুশি ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল শান্ত, ছিমছাম। এরপর হঠাৎই (মাখোঁর সঙ্গে) “এই” সম্পর্কটা তাঁর জীবনে এসে পড়ল।’
এখানে ‘এই’ বলতে বোঝানো হচ্ছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই মেধাবী ছাত্রের (মাখোঁ) প্রতি ব্রিজিতের আকর্ষণকে, যে কিনা যোগ দিয়েছিল তাঁরই পরিচালিত স্কুলের নাট্যদলে। বোমেল জানাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯৪ সালের বসন্তে। তখন মাখোঁর বয়স ১৬, আর ব্রিজিতের ৪০। দুজনে মিলে একটি নাটক নতুন করে লিখেছিলেন, যাতে নাট্যদলের প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি করে চরিত্র রাখা যায়। বোমেল বলেন, ‘অন্তত তখন থেকেই লোকজন তাঁদের হাতে হাত ধরে হাঁটতে দেখা শুরু করেন।’

এই সম্পর্ক আমিয়েঁ শহরের ক্যাথলিক মধ্যবিত্ত সমাজে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু চিঠি পৌঁছায়, যেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বেনামি। এসব চিঠিতে শিক্ষিকার আচরণকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানানো হয়। ব্রিজিতের পরিবারের কাছেও একই ধরনের বিষাবাষ্পে ভরা চিঠি পাঠানো হয়েছিল। মাখোঁর মা–বাবা ব্রিজিতকে স্পষ্টভাবে বলেন, তিনি যেন তাঁদের ছেলেকে ছেড়ে দেন।
খাতা–কলমে তাঁরা (মাখোঁর মা–বাবা) চাইলে ফরাসি আইনের আওতায় বিষয়টি কৌঁসুলিদের জানাতে পারতেন এবং তা থেকে একটি অপরাধমূলক তদন্ত শুরু হতে পারত। ফরাসি আইন অনুযায়ী, যাঁরা কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকেন, তাঁদের অধীন থাকা কোনো নাবালকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে বাস্তবে মাখোঁর মা–বাবা, স্কুলপ্রধান বা কারও পক্ষ থেকেই কোনো তদন্তের দাবি ওঠেনি। এমনকি তাঁরা খতিয়ে দেখতেও চাননি যে ছেলেটি ও শিক্ষিকার সম্পর্ক শুধু ‘হাত ধরা’ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল কি না। এ প্রশ্ন কার্যত এড়িয়ে যাওয়া হয়। মাখোঁর মা-বাবা তাঁকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেন এই আশায় যে সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে।
কিন্তু এটা হয়নি। মাখোঁ তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় একটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ প্রতিষ্ঠান ১৯৪৫ সাল থেকে দেশের অভিজাত শ্রেণি তৈরি করছে।

এদিকে ব্রিজিত, তখনো ‘ম্যাডাম ওজিয়ের’ হিসেবে পরিচিত। তিনি এ সময় সন্তানদের লালন-পালন করতে থাকেন এবং বাইরে থেকে বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। ব্রিজিতের স্বামী আন্দ্রে-লুই ওজিয়েরের বেশির ভাগ সময় কাটত কর্মস্থলের বাইরে। সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরলেও তখন অনেক সময় স্ত্রী নিজের প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাইরে থাকতেন। তবে ওজিয়ের দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০০৬ সালে, আর ব্রিজিত এর এক বছর পর ২০০৭ সালে পুনর্বিবাহ করেন।
ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিলঁন ও তাঁর স্ত্রী পেনেলোপের বিয়ে নিয়েও বই লিখেছেন বোমেল। তিনি মাখোঁ ও ব্রিজিত সম্পর্কে বলেছেন, ম্যাডাম মাখোঁর ‘অবিশ্বাস্য সাহস’ বুঝতে তিনি এ বই রচনা করেন। তিনি জানতে চাইতেন, ওজিয়ের কীভাবে ঘটনাগুলো দেখতেন। বিশেষ করে মাখোঁ×যখন তাঁর স্ত্রীর দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ‘আমার সন্তান’ বলে উল্লেখ করেন, এ ব্যাপারে তাঁর কী মত ছিল। বোমেলের ধারণা, ওজিয়ের সম্ভবত এতে খুশি ছিলেন না।
কিন্তু ওজিয়ের সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাননি লেখিকা। বরং তাঁর বিশ্বাস, মাখোঁর উপদেষ্টারা হয়তো তাঁকে ইতিহাস থেকে (অন্তত সাইবার-ইতিহাস থেকে) মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। বোমেল বলেন, ‘যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবায়, তা হলো ইন্টারনেটে তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। আমি ভাবি, নির্বাচনী প্রচারের সময় কেউ হয়তো এসব তথ্য “ছেঁটে ফেলা”র অনুরোধ করেছিলেন। ফ্রান্সের একটি বড় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সম্পর্কে কোনো তথ্য না থাকা সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার।’
বোমেল মনে করেন, ওজিয়ের ৬৮ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেছেন এবং প্যারিসে বসবাস করছেন। এমন হতে পারে যে ওজিয়ের নিজেই বিষয়গুলো গোপন রাখছেন। ৩৫ বছর বয়সী টিফেন ওজিয়ের ব্রিজিত তাঁদের ছোট মেয়ে। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁরা ভালো আছেন, তবে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার মধ্যে থাকতে চান।’ যা-ই হোক, বোমেল বিশ্বাস করেন না যে ওজিয়ের এমন কিছু বলতে পারেন, যা তাঁর বইয়ের মূল যুক্তিকে দুর্বল করে। তাঁর বইয়ের কেন্দ্রীয় তত্ত্ব হলো, ১৯৯০-এর দশক থেকে মাখোঁ দম্পতি সবকিছু সহ্য করে একসঙ্গে থেকেছেন। বোমেল বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা একে অপরের প্রতি অনুগত ছিলেন, যদিও একসঙ্গে থাকতেন না। এই ১০ বছরে মাখোঁর একগুঁয়েমি বোঝা যায়। এটা তাঁর চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য। আপনি তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন, তাঁর এ অটল থাকা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি তাঁকে (ব্রিজিতকে) বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন।’

ব্রিজিত সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়, যিনি তাঁদের সম্পর্কের শুরুর দিকে ধিক্কার ও সামাজিক বর্জনের শিকার হয়েছিলেন এবং এখনো সময়–সময় তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন। যদিও ভোটারদের একটি অংশ তাঁর প্রশংসা করেন। কারণ, তিনি নিজের চেয়ে দুই দশকের বেশি ছোট একজন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। অন্য অনেকে তাঁকে অপছন্দ করেন। কারণ, তিনি ফরাসি রীতি ভেঙেছেন, যেখানে নারীরা সাধারণত নিজের চেয়ে বেশি বয়সী পুরুষদের পছন্দ করেন। সংবাদপত্রের মন্তব্য বিভাগে তাঁর সম্পর্কে নিয়মিত নেতিবাচক মন্তব্য দেখা যায়। বোমেল জানান, এলিসি প্রাসাদে পাঠানো চিঠিতেও এমন অপমানজনক কথা লেখা থাকে।
বোমেল বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) তাঁর (ব্রিজিত) সন্তানের চেয়ে ছোট, যা আমাদের মধ্যে অবচেতন মনেই এক আলাদা মাত্রা যোগ করে। আপনি যদি এমন একজন ছেলের সঙ্গে প্রেম করেন, যিনি আপনার ছেলের চেয়ে ছোট, তবে অবচেতন মনে আমরা ভাবি, আপনি নিজের ছেলের সঙ্গেও প্রেম করতে পারেন। তাই এ সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা রকমারিভাব দেখা যায়, যা মানুষকে নাড়া দেয়। আমি তাঁদের সম্পর্কে ভয়ানক সব লেখা পড়েছি। মানুষ বলে, তাঁরা বিকৃত মানসিকতার। আদৌ এ জুটি একসঙ্গে আছেন কি না, সেটাও তাঁরা বিশ্বাস করেন না।’
‘আমি মনে করি, এই প্রতিক্রিয়াগুলো আমাদের সমাজ সম্পর্কে কিছু বলে। এটি দেখায়, আমাদের সমাজের একটি অংশ এখনো এ ধরনের বিবাহ মেনে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়,’ বলেন বোমেল।
লেখিকা বলেন, এ ধরনের মনোভাবই হয়তো সেসব গুজবের পেছনে কারণ হতে পারে, যেগুলো এ দম্পতি সম্পর্কে ২০১৪ সালে মাখোঁ অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ছড়ায়। একটি গুজবে বলা হয়, মাখোঁ সমকামী। আরেকটি বলে, তাঁর স্ত্রী আজীবন তরুণ ছেলেদের প্রেমে পড়ে এসেছেন। বোমেল বলেন, ‘সমকামী গুজব একসময় চারদিকে ছিল।’ বোমেল মনে করেন, ফ্রান্সের দূরবর্তী ছোট ছোট গ্রামেও তিনি এটি শুনেছেন। লোকজন বলত, ‘আমি জানি ও সমকামী।’

বোমেলের দীর্ঘ ও শ্রমসাধ্য গবেষণায় এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ইলিসি প্রাসাদে লুকানো কোনো সমকামী প্রেমিক আছেন। উইন্টার গার্ডেনে কোনো খেলনা বালকও নেই। বরং বোমেল নিশ্চিত, গত ৫০ বছরে এই প্রথম ফ্রান্স এমন একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যিনি একটি সুখী দাম্পত্য জীবনে রয়েছেন। ‘যা স্পষ্ট তা হলো, তিনি একটি স্থিতিশীল সম্পর্কে আছেন এবং আপনি এটা বলতেই পারেন না যে তা গুরুত্বহীন বিষয়। আপনি বা আমি যদি বড় কোনো পারিবারিক সমস্যায় পড়ি, তা আমাদের কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু মাখোঁ তাঁর কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পেরেছেন’, বলেন বোমেল।
মাখোঁ সম্পর্কে আরেকটি গুজব হলো, তাঁর যৌনতার প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। বোমেলের বইয়ের এক জায়গায় একজন উপদেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকাকালীন তরুণীদের প্রতি তাঁর (মাখোঁ) কোনো আকর্ষণ দেখা যায়নি, যা সেখানকার দায়িত্ব পালনকারী প্রায় প্রত্যেক পুরুষের মধ্যে দেখা যেত। তবে বোমেল জানেন না, মাখোঁ কি তাঁর স্ত্রীর প্রতি এতই উত্সর্গিত যে অন্য কারও দিকে তাকানোর সময় তিনি পান না, নাকি তিনি একেবারে যৌন আকর্ষণহীন।’
যাহোক, বোমেল মাখোঁকে “অ্যান্টি-ডমিনিক স্ট্রস-কান” বলে আখ্যায়িত করেন, যিনি সেই প্রাক্তন আইএমএফপ্রধান, যে ধর্ষণ ও দেহব্যবসার অভিযোগে বিতর্কে জড়িয়ে ক্যারিয়ার শেষ করে ফেলেন। যদিও পরে তিনি এসব অভিযোগ থেকে খালাস পান।