প্রান্তডেস্কসচিবালয়ে থাকা আওয়ামী লীগের দোসর আমলাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’। মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সচিবালয়ে ও প্রশাসনে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই ঐক্য। সংবাদ সম্মেলনে সচিবালয়ে কর্মরত ৪৪ জন আমলার তালিকা এবং প্রশাসনের ৫১ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এ সময় তারা বলেন, এই তালিকা প্রধান উপদেষ্টা এবং জনপ্রশাসন সচিবের কাছে তুলে দেওয়া হবে। তারা কি ব্যবস্থা নেয় দেখে আন্দোলনন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বক্তারা বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বৈরাচারি সরকার পালিয়ে গেছে। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসরা বিদ্যমান সবর্ত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি পালিয়ে গেছেন। আবার ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া বহু নেতারাও পালিয়ে গেছেন। আর তাদেরকে এসব কর্মকর্তারাই পালাতে সহযোগীতা করেছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে কিন্তু অন্য কিছু বদলায়নি। সেই পেটোয়া বাহিনী, সেই কর্মকর্তা সবই বহাল তবিয়তে রয়েছে।’
শহিদ মুনতাছির রহমান আরিফের বাবা গাজিউর রহমান তালিকা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ছেলে ফ্যাসিবাদির বিলুপ্তি চেয়েছিল। চেয়েছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে দেশ ভাল চলবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা ইন্ধন দিয়েছে তারা বহাল তবিয়তে। আমরা যে মামলা করেছি তার একজন অপরাধীকেও ধরা হয়নি। না ধরলে বিচার কীভাবে হবে। উল্টো আমাদের হুমকি দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা হত্যা করেছে তারাই আবার এই ঘটনার তদন্ত করছে। তাহলে কীভাবে সত্য উদঘাটন হবে? কীভাবেই বিচার হবে? তিনি বলেন আমরা জানি এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তারা বহাল রয়েছেন।’
৪৪ জন সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, পানি সচিব নাজমুল হাসান, পরিবেশ সচিব ফারহানা আহমেদ, কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, ভুমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান ইব্রাহিমসহ ৪৪ জন। যাদের সবাই কর্মরত।
জুলাই ঐক্যের নেতা প্লাবন তারিক বলেন, ‘লীগের সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এসব সচিবেরা। আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ দিয়ে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একজন সচিব নাজমুল আহসান এক সময় সাতক্ষীরার ডিসি ছিলেন, তার নির্দেশে অনেক মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছেন। তিনি কট্টর আওয়ামী লীগের সমর্থক। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন। সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মফিউর রহমান মুজিব শতবর্ষের সময় বই লেখেন। তিনি বানোয়াট গল্প লিখে তাবেদারি করেছেন। তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার তা শোনেনি। এ ধরনের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সেসব কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের না সরালে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট থাকবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আমরা ঝুকি নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করছি। জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেবোনা। উজ্জল কুমার হালদার, অমিত কুমার সাহা, শামসুজ্জামান কনক, জিসান, আফরিন জাহানসহ ৯৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।’
এ সময় সরকারের কাছে কিছু দাবি জানানো হয়, সেগুলো হলো:
- আগামী ৩১ মে এর মধ্যে তালিকায় উল্লিখিত সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগের সব দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে।
- তিন সরকারি কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে।
- দেশের তথ্য পাচারকারী ছাত্রজনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সকল আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে।
- স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
- আগামী ৩৬ শে জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সকল স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
- আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে ২০২৫ খ্রি. মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে।
- আগামী ৩১ মে এর মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছে এবং কত জন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছে তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ৩১ মে এর মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ, সচিবালয় ও প্রশাসন স্বৈরাচারের দোসর মুক্ত এবং ১৩২ ধারা বাতিল বা সংশোধন না করলে। আগামী ৩১ মে এর পর ছাত্রজনতা এবং জুলাইয়ের চেতনা ধারণকারী সকল সংগঠনকে নিয়ে লং মার্চ টু সচিবালয়সহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।