মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারীনেত্রী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরজাহান মুরশিদ ১৯২৪ সালের ১৯ মে মুর্শিদাবাদ জেলার তারানগরে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবন শুরু করেন বরিশালের সায়দুন্নেসা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে। পরে ঢাকার কামরুন্নেসা স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল, হলিক্রস কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের আগে নূরজাহান অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষিকা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৪৮ সালে নূরজাহানের বিয়ে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খান সরওয়ার মুরশিদের সঙ্গে। নূরজাহান মুরশিদ যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেন এবং পূর্ব বাংলার আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ‘আইন পরিষদ সচিব’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় বিধানসভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। খান সরওয়ার মুরশিদ এবং নূরজাহান মুরশিদের চার সন্তানই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালে নূরজাহান মুরশিদ বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন। ‘একাল’ নামে তিনি একটি বাংলা সাময়িকী চালু করেছিলেন। এর প্রকাশনা খুব দীর্ঘস্থায়ী ছিল না, তবে ‘এদেশ-একাল’ নামে সাময়িকীটির নতুন প্রকাশ বেশ কয়েক বছর অব্যাহত ছিল। নূরজাহান মুরশিদ ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।