১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ছিলেন। প্রীতিলতা ১৯২৯ সালে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিস্টিংশনসহ গ্র্যাজুয়েশন করেন প্রীতিলতা। ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালে প্রীতিলতা লীলা নাগের নেতৃত্বাধীন দীপালি সংঘের অন্তর্ভুক্ত শ্রীসংঘের সদস্য হন। গ্র্যাজুয়েশন করার পর তিনি চট্টগ্রামের ‘নন্দনকানন অপর্ণাচরণ’ নামক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে বাংলা জুড়ে অনেক বিপ্লবী দল সংগ্রামরত ছিল। প্রীতিলতা এ সময় সূর্যসেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলের প্রথম নারী সদস্য হন। তিনি টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইনস দখল অভিযানে যুক্ত ছিলেন। তিনি জালালাবাদ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতার আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজবন্দি রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে যথাসময়ে তা পালন করেন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ধলঘাট সংঘর্ষে কয়েকজন বিপ্লবী প্রাণ হারান। তবে মাস্টারদা ও প্রীতিলতা পালাতে সক্ষম হন। শিগগির পুলিশের জরুরি গ্রেপ্তারি তালিকায় প্রীতিলতার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। মাস্টারদা তাকে স্কুল ছেড়ে দিয়ে পুরুষ বিপ্লবীদের মতো আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। প্রীতিলতা অপর এক বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্তসহ গোপন আস্তানায় চলে যান। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ এরূপ অবমাননামূলক কথার জন্য ক্লাবটির দুর্নাম ছিল। ক্লাব আক্রমণ সফল করে পুরুষবেশী প্রীতিলতা সামরিক কায়দায় তার বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে মৃত্যুকে বরণ করে নেন। প্রীতিলতার আত্মদান বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামকে আরও উজ্জীবিত করে তোলে।