প্রান্তডেস্ক:বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শহ আলম বলেছেন, ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো চলমান।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে চট্টগ্রাম যুব বিদোহ ৯৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন । ।তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ প্রায় পৌনে ২০০ বছর লড়াই করেছে। কিন্তু সেই জাতীয় মুক্তি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সফল হয়নি, কারণ উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আজও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। মোহাম্মদ শহ আলম আরও বলেন, ‘একাত্তরে আমরা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর দেশে সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভাবাদর্শ পুনর্বাসিত হয়েছে। ২৪-এর অভ্যুত্থানের পরও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার নতুন উত্থান ঘটছে। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সূর্যসেনের নেতৃত্বে যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই শুরু হয়েছিল, তা আজও চলমান। এই সংগ্রাম উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, কমিউনিস্ট ও বামপন্থী শক্তির মূল লড়াই। কোটি কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের সঙ্গে এই লড়াই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাম্রাজ্যবাদকে তিনি বিশ্বমানবতার শত্রু, দেশের শত্রু এবং উপমহাদেশের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।’
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদ এখন নতুন কৌশলে শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। আগে ব্রিটিশরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান এই দেশের সম্পদ লুটে নিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও সেই লুটপাট ও পাচার থামেনি। আজও দেশের টাকা পাচার হয়ে বিদেশে ‘‘বেগমপাড়া’’ গড়ে তোলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল, কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও অর্থপাচার বন্ধ হয়নি, শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ হয়নি, মেহনতী মানুষকে শোষণ করা চলছে। ব্রিটিশ আমল বা পাকিস্তান আমলের মতো শোষণ ও দমন এখনও বহাল আছে।’চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের চেতনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মাস্টারদা সূর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের যে বিপ্লবী চেতনা ছিল, আগামী দিনের ছাত্র ও যুব সমাজ সেই চেতনা ধারণ করে আবারও সংগ্রাম গড়ে তুলবে। সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’ তিনি ১৮ এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৩ নভেম্বর নয়, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দিন ১৮ এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য ত্রিদিব সাহার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ ইরান মোল্লা,সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফিজুল ইসলাম রফিক প্রমুখ।এর আগে, যুব বিদ্রোহ দিবস স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয় সিপিবিসহ বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর চারদিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তিন ঘণ্টার সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।