প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পিতৃদত্ত নাম ছিল অণিমা মুখোপাধ্যায়, পারিবারিক ডাক নাম ছিল ‘মোহর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নাম পরিবর্তন করে নাম দেন ‘কণিকা’। ঘনিষ্ঠজনরা তাকে ‘মোহর দি’ ডাকতেন। বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ের পর নাম হয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে আসার পর তার আনুষ্ঠানিক গান শেখার শুরু। রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায়ই নতুন গান শিখতে যেতেন। ১৯৩৭ সালে প্রথম কলকাতার ছায়া সিনেমা হলে আয়োজিত বর্ষামঙ্গল উৎসবে কণিকা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’ গানটি গেয়েছিলেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তার ইচ্ছানুসারে ‘সমুখে শান্তিপারাবার’ গানটি গেয়ে কবিগুরুকে চিরবিদায় জানানোর কোরাস পরিবেশনায় অংশ নেন কণিকা। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে যোগদান করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একক এবং সহশিল্পীদের সঙ্গে তার রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২৮টি। একক এবং দ্বৈতকণ্ঠের রেকর্ডের পাশাপাশি তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন ‘শ্যামা’, ‘মায়ারখেলা’, ‘তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘কালমৃগয়া’ নৃত্যানাট্য ও গীতিনাট্যে। এছাড়া তিনি অতুলপ্রসাদ ও নজরুল সংগীতও গেয়েছেন। মৃত্যুর পর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া সুরম্য উদ্যানটির নাম রাখা হয় ‘মোহরকুঞ্জ’।