সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃদত্ত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণি পাস করে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। তার বাবা ছিলেন এই মাদ্রাসার শিক্ষক। দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে মজুপুর চলে আসেন। জহির রায়হান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ ডিগ্রি নেন। তিনি সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। খাপছাড়া পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। পরে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চলচ্চিত্রে যুক্ত হন ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন উর্দুতে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’। ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘আর কত দিন’, ‘তৃষ্ণা, ‘হাজার বছর ধরে’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তার পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একাত্তরের যুদ্ধকালে তার নির্মিত বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। এরপর আরও অনেক কাজের পরিকল্পনা থাকলেও করতে পারেননি। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে বিহারি-রাজাকার অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার পর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সেদিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।