কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। আইনজীবী বাবা রাজকুমার সেনগুপ্তের কর্মস্থল ছিল নোয়াখালীতে। অচিন্ত্যকুমার ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় বড় ভাই জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কাছে চলে যান। সাউথ সাবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ এবং ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বিএ পাসের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও ল’ পাস করেন। অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে সাবজজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পর কল্লোল যুগের যেসব লেখক সাহিত্যজগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন অচিন্ত্যকুমার তাদের অন্যতম। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’। রোমান্টিকতা ও গণচেতনা তার কবিতার মূল ভাব। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য ছিল তার রচনার মুখ্য বিষয়। তার গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৭০। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস : কাকজ্যোৎস্না, বিবাহের চেয়ে বড়, প্রাচীর ও প্রান্তর, প্রথম কদমফুল। কাব্যগ্রন্থ : অমাবস্যা, আমরা, প্রিয়া ও পৃথিবী, নীল আকাশ, উত্তরায়ণ। জীবনীগ্রন্থ : পরম পুরুষ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ (চার খণ্ড), বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (তিন খণ্ড)। নাটক : একাঙ্ক নাট্যসংকলন। গল্পগ্রন্থ : টুটা-ফুটা, কাঠখড়, কেরোসিন, চাষাভুষা, একরাত্রি ইত্যাদি। ১৯২৫ সালে তিনি কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তার স্মৃতিচারণামূলক রচনা ‘কল্লোল যুগ’ বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘জগত্তারিণী পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ও ‘শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেন।