শিক্ষাবিদ, পন্ডিত ও অভিধানকার হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৬৭ সালের ২৩ জুন চব্বিশ পরগনা জেলার রামনারায়ণপুর গ্রামে। তার পিতা শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় এক জমিদারের কাচারিতে চাকরি করতেন। ছাত্রজীবনেই হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি প্রবেশিকা ও এফএ পরীক্ষা পাস করার পর বৃত্তি নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বাংলা ১৩০৮ সনে কলকাতা টাউন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রধান প-িত নিযুক্ত হন। এর পর রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অন্তর্গত পতিসরের কাচারির সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদান করেন। পতিসরে জমিদারি পরিদর্শনে এসে রবীন্দ্রনাথ হরিচরণের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ লক্ষ করে সে বছরেই তাকে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে সংস্কৃতের শিক্ষক নিযুক্ত করেন। হরিচরণ এ স্কুলে তিরিশ বছর শিক্ষকতা করেন। রবীন্দ্রনাথ পরে তাকে অভিধান রচনায় অনুপ্রাণিত করেন। এরই ফসল হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত বিখ্যাত অভিধান ও কোষগ্রন্থ ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। এ অভিধানটি শব্দার্থের গভীর ও ব্যাপকতর অর্থ নির্ণয় করার জন্য খুবই উপযোগী। বঙ্গীয় শব্দকোষ ছাড়াও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের কথা, সংস্কৃত-প্রবেশ, ব্যাকরণ-কৌমুদী, Hints on Sanskrit Composition & Translation, পালিপ্রবেশ প্রভৃতি গ্রন্থ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক, ১৯৫৪ সালে শিশিরকুমার স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।