সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন: অরাজকপরিস্থিতি তৈরি করতে চায় ইন্ধনদাতারা
সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান
প্রান্তডেস্ক:বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইন্ধনদাতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। হয়তো একেকজনের মতলব একেক রকম। তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক স্বার্থ থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হলো ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া। ইন্ধনদাতারা একটা কিছু পোস্ট করার পর অনেকে তা না বুঝেই ছড়িয়ে দেন। ফলে অনেক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর সেনা অফিসার্স মেসে সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২০ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত হয়েছেন। একজন কর্মকর্তা শাহাদাৎ বরণ করেছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনৈতিক ব্যক্তি-দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের কেপিআই ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা, কলকারখানা সচল রাখাসহ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের একটি হলো চিহ্নিত অপরাধী গোষ্ঠী; যাদের কাজই হচ্ছে অপরাধ করা। আরেকটা হচ্ছে ইন্ধনদাতা। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করছে। আরেকটা বড় গ্রুপ দেশের সাধারণ মানুষ। যেমন ছাত্ররা বা এর আগে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকরা যা করেছে। আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর মূল ভূমিকা কিন্তু চিহ্নিত অপরাধী ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। ছাত্ররা যখন কারও ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে পথভ্রষ্ট হচ্ছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের একটু চিন্তা করতে হয়। ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলন করে দেশের এমন একটা পরিবর্তন এনেছে। আশা করি, দেশটা ভালো অবস্থায় যাবে।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দেখলে তা যাচাই করতে হবে। ঘটনা সত্য হলেও সহিংস প্রতিবাদ করার প্রয়োজন নেই। অনেক শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করা যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, গোয়েন্দা ঘাটতি আছে বলব না। গোয়েন্দা, পুলিশসহ সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা করে কাজ করতে হচ্ছে। এতে অনেকের মনে হতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক ঘটনা আগেভাগে প্রতিরোধ করা গেছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা অপরাধে জড়িয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে হয়তো সেনাসদস্য বা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। কিছু তদন্ত এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সর্বোচ্চ চার থেকে এক বছর পর্যন্ত জেল হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, গত দুই সপ্তাহে শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও ১৮টি সড়ক অবরোধের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ৬৩টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৩২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বর্তমানে ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সেনাবাহিনী। সিএমএইচে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি আহত মানুষের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।