খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার এক সংগীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনায় শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরে বাঁশি বাজানোয় আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশিতে উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রশিক্ষণ নেন। তিনি মূলত লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করতেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনেতে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্ল্যাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রেরণায় নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের সংগীত জগতে মনোনিবেশ করেন এবং অল্পদিনেই বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গান গেয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন। ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৯৯ সালেই জেনিভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশ নেন। বারী সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ও গানের কথা লিখেছেন। বারী সিদ্দিকীর গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’, ‘ওগো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বারী সিদ্দিকী মৃত্যুবরণ করেন।