হুমায়ূন আহমেদ নামটি আজ আর শুধু একজন লেখকের পরিচয় নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ব্র্যান্ড। তার উপন্যাস, কাহিনী, চরিত্র এবং বিশেষ করে তার অমর সৃষ্টি ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলি’—এই দুটি চরিত্র বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
হুমায়ূন তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ১৯৭০ সালে, প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকের’ মাধ্যমে। তবে তিনি প্রকৃত জনপ্রিয়তা পান ‘মধ্যাহ্ন’ (১৯৭৭) উপন্যাসের মাধ্যমে।
লেখালেখির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তার পরিচালনায় ‘শুভ সূচনা’ (১৯৮৬) এবং ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪) চলচ্চিত্র দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার নাটক যেমন টেলিভিশন দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তেমনি তার চলচ্চিত্রও শিল্পীসমাজে প্রশংসিত হয়েছে।
সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনাহীন।
তার সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। হুমায়ূনের অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, শঙ্খনীল কারাগার, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি।
হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর মধ্যে তার জীবনের অসাধারণ অনুভূতির প্রতিফলন ঘটেছিল। তার মতো সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব যেন ছিল এক নিত্য নতুন আবিষ্কারের খনি।
তিনি যে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, তাতে যেন জীবনের সমস্ত জটিলতা, সুখ-দুঃখ, মানবিক সম্পর্ক, এবং আদর্শ—সবকিছুই ছিল অমৃতরসের মতো। বিশেষ করে তার গল্পের মধ্যে কমেডি, ট্র্যাজেডি এবং রোমান্স একসাথে মিলেমিশে এমন এক জাদু সৃষ্টি করেছিল, যা পাঠক-দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেত।
হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য স্রোত যেমন আজও চলছে, তেমনি তার দর্শন, তার জীবনদর্শন, তার ভাবনা, এবং চিন্তা-চেতনা আজও প্রেরণা হিসেবে আমাদের সামনে আজও যেন নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে।