ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়ায় ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর। তার বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। নিজ গৃহে মুনশির কাছে আরবি ও ফারসি শেখার মাধ্যমে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। পরে পাঠশালায় গিয়ে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কুষ্টিয়া স্কুলে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে কলকাতার কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু লেখাপড়া আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথমে তিনি বাবার জমিদারি দেখাশোনা করেন। পরে ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার হন। একসময় চাকরি ছেড়ে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় চলে যান। ছাত্রাবস্থায় তিনি সংবাদ প্রভাকর ও কুমারখালীর গ্রামবার্তা প্রকাশিকার মফস্বল সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। এখানেই তার সাহিত্যজীবনের শুরু। গ্রামবার্তার সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ ছিলেন তার সাহিত্যগুরু। তিনি ১৮৭৪ সালে আজিজননেহার ও ১৮৯০ সালে হিতকরী নামে দুটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। তিনি ছিলেন বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী এবং উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। ‘বসন্তকুমারী’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘বিষাদসিন্ধু’, ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ‘গাজী মিয়ার বস্তানী’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি। কারবালার বিষাদময় কাহিনি অবলম্বনে ‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাস লিখে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। গতিশীল গদ্য রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। নাটক ও আত্মজৈবনিক উপন্যাসগুলোতে তিনি সমকালীন সমাজের অসংগতি ও সমস্যার ওপর তীক্ষè কটাক্ষপাত করেন। ১৯১২ সালে তিনি মারা যান।