১৯৭০ সালের ৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। তার জন্ম দিনাজপুরের বালিয়াডাঙ্গীতে ১৯১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। তার প্রকৃত নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘নারায়ণ’ তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালের বাসুদেবপুরে। তার বাবা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশের দারোগা। ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারণে ১৯৩৫ সালে তাকে ফরিদপুর ত্যাগ করতে হয়। পরে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে ভর্তি হন এবং নন-কলেজিয়েট ছাত্র হিসেবে ১৯৩৬ সালে আইএ এবং ১৯৩৮ সালে ডিস্টিংকশনসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল করায় তিনি ব্রহ্মময়ী স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ডি.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে জলপাইগুড়িতে কিছুদিন এবং কলকাতার সিটি কলেজে ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করার পর ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ছাত্রজীবনে কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে। কালক্রমে তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি রচনা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। সাহিত্যে ছোটগল্প, কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ, উপন্যাস উপনিবেশ, সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী, সুনন্দর জার্নাল ও টেনিদা সিরিজ তার বিখ্যাত গ্রন্থ। তিনি শনিবারের চিঠির নিয়মিত লেখক ছিলেন। জীবনের শেষ সময়ে তিনি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ‘সুনন্দ’ ছদ্মনামে লিখতেন। ইতিহাসবোধ ও স্বাদেশিকতা তার রচনার উপজীব্য। বাংলার নিসর্গ ও নদ-নদীর তরঙ্গমালা, বাঙালির আদিম ও আরণ্যক জীবন তার উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেন। তার রচিত বহু গান, চলচ্চিত্র ও রেকর্ডে গৃহীত হয়েছে। আনন্দ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।