ছাত্রদের নিত্য নতুন দাবি, সরকারের কি সমর্থন আছে, জানতে চায় রাজনৈতিক দলের নেতারা
প্রান্তডেস্ক:কিছু বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নতুন নতুন দাবি হাজির করছে, আর এসব দাবি কোনো আলোচনা বা কথাবার্তা ছাড়াই আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সরকারেও আছেন, তাই তাদের এসব দাবির প্রতি সরকারের সমর্থন আছে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে ‘অর্জন বিসর্জনে’ পরিণত হতে পারে বলেও মনে করেন তারা। গতকাল (২৮ অক্টোবর,সোমবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন: গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আলোচনা সভাটির আয়োজন করে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এই আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ঐক্যমত কি সিলেক্টিভলি করা হচ্ছে? সিলেকটিভ বা বাছাইকৃত সংস্কার করলে হবে না। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে।’ জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐকমত্যে বিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রত্যেকটি বিষয়ে, বিশেষ করে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই বলেও উল্লেখ করেন আমীর খসরু।
সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের গঠন করা ১০টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাদের তোলা ইস্যুর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন আছে কি না, এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে।’
৮০ দিনে সরকারের তিনটি অর্জন দেখতে পাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেগুলো হলো, উন্নয়ন সহযোগীরা বড় অর্থসহায়তা দেবেন বলেছেন, দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঋণ শোধ করেছেন এবং আরব আমিরাতে বন্দী ৫৭ জনকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, ‘সরকার গত ৮০ দিনে এই তিনটি ভালো কাজ করেছে। এর বাইরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ দেখা যায় না। জনগণের কল্যাণে তারা কোনো সংস্কার করেছে, তার প্রমাণ নেই।’
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলনে, এটি ভালো বার্তা দেয়নি। তারা (আন্দোলনকারীরা) সরকারে থেকেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, পথ একটাই ন্যূনতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই সরকার যেন বুঝে, এজেন্ডার বাইরে যেন তারা না যায়।’
একটি জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সব সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। এর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, কেউ দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে আওয়ামী লীগ অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। এটা না করে দেখতে হবে দাবির ন্যায্যতা আছে কি না।’ তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ যদি বলে থাকেন সেখানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাহলে সেটি ঠিক নয়।
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস আগে সবার মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তাতে এখন ক্ষয়িষ্ণু ভাব দেখা যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে, এটাই বড় অর্জন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই বিতর্ক তৈরি করেছেন।’
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, এলডিপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রাষ্ট্রপতি ইস্যু নিয়ে দেশে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকলো কি থাকল না এটা মুখ্য বিষয় নয়। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি। এখন তার দোসরদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব।’ রাজধানীর আজিমপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা বিষয়ক লিফলেট বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘ছাত্রজনতার আন্দোলনের পরে আমরা কিছুটা হলেও নিঃশ্বাস নিতে পারছি। কিন্তু আমাদের অতিরঞ্জিত কিছু করার কারণে এই আন্দোলন যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শেখ হাসিনা বসে নেই, তার আশ্রয়দাতারাও বসে নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছেন, সেখানে অনেকেরই বিচার হবে। কিন্তু আমরা যদি কাজের বদলে অকাজে বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করি, তাহলে তো জনগণ কথা বলা শুরু করবে। শুধু জটিলতার পর জটিলতা তৈরি করছেন কেন আপনারা? শেখ হাসিনার দোসর তো আরও অনেকেই আছে আপনাদের মধ্যে, কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদারের নাম উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘তিনি এক এগারোতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, শেখ হাসিনার আমলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাকে আপনারা উপদেষ্টা বানিয়েছেন। এরকম তো অনেকেই রয়েছেন এসব বিষয়ে আপনারা তো কিছু বলেন না। শেখ হাসিনার রক্তাক্ত দুঃশাসনকে যারা প্রলম্বিত করেছে, যারা নিঃস্বার্থভাবে শেখ হাসিনার তাবেদারি করেছে তারা এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’