প্রান্তডেস্ক:সম্প্রতি বাংলাদেশে ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের পর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ করার বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে। প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক স্বাধীনতা যেন উপভোগ করতে পারে, সেটিই চায় ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এবারের ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর দেন দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
ব্রিফিংয়ে এক প্রতিবেদনের বরাতে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে ২৫২ জন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরকে চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই ব্যাচের সব হিন্দু অফিসারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি না?
জবাবে মিলার বলেন, আমি সেই প্রতিবেদনটি দেখিনি। তবে স্পষ্টতই আমরা বিশ্বাস করি, আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বে যে কোনো প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধর্মীয় বৈষম্যের বিরোধিতা করব।
পরে ওই প্রশ্নকারী জানতে চান, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন নিয়োগকে সমর্থন করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কীভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে? জবাবে মিলার বলেন, আমি আগে যা বলেছি, সেটার সাথে নতুন করে যোগ করার কিছু নেই।
কথিত বৈষম্যের এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনি আমাকে এমন একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে অনুমানমূলক উত্তর দিতে বলছেন, যা আমি দেখিনি এবং আমি আবারও আপনার এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেব না।
পরে ওই প্রশ্নকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করছে। সম্প্রতি এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ওপর এসব পদক্ষেপের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখছে? দেশে ন্যায্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে?
জবাবে মিলার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের জনগণের তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতাসহ তাদের মৌলিক স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল যেই থাকুক না কেন, এটাই হওয়া উচিত এবং আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি এই মঞ্চ থেকে এটি বহুবার স্পষ্ট করেছি।
পরে এক সাংবাদিক সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সফর নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি ভার্মা, আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ছাড়াও এনএসসি এবং গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কমিশনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আপনারা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন সে সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাচ্ছি।জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এ বিষয়ে জানানোর জন্য আমার কাছে আর কোনও রিডআউট নেই।
প্রসঙ্গত, ট্রেনিংয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি থেকে ২৫২ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
২২ অক্টোবর সকাল থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা।তিনি জানান, সারদায় মোট ৮২৩ জন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই ছিলেন। এর মধ্যে ট্রেনিংয়ে শৃঙ্খলাজনিত কারণে ২৫২ প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে।