জাপানের ক্ষমতাসীনরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল
প্রান্তডেস্ক:জাপানের আগাম নির্বাচনে দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)। জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডায়েটে এলডিপি ও তাদের শরিক কোমেইতো মিলে পেয়েছে ২১৫টি আসন, যেখানে বিরোধীরা পেয়েছে ২৩৫টি আসন। নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে অন্তত ২৩৩টি আসনের প্রয়োজন হয়।
স্থানীয় সময় সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে তিনি বলেছেন, ভোটাররা আমাদের কঠোর রায় দিয়েছে এবং আমাদেরকে এই ফল বিনয়ের সঙ্গে মেনে নিতে হবে।শিগেরু ইশিবা বলেন, জাপানের জনগণ এলডিপির কাছে তাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছে এবং এলডিপি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দল হয়ে উঠবে।
বিবিসি লিখেছে, এলডিপির নতুন নেতা শিগেরু ইশিবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনের আগে জাপানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, এলডিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে ইশিবা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। আর সেটি হলে যুদ্ধোত্তর জাপানে সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি।
২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এলডিপি। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি বেশিরভাগ সময়ই জাপানের ক্ষমতায় ছিল।
একের পর এক কেলেঙ্কারিতে এলডিপির টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই রোববার জাপানে আগাম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়।
রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ নিয়ে কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর এ বছরের শুরুতে জনমত জরিপে এলডিপির প্রতি মানুষের আস্থা ২০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। কিন্তু বিরোধীরা যে সে বিষয়টি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে, তা বলা যাবে না।
এলডিপির টালমাটাল অবস্থাতেও বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনই শাসনের প্রশ্নে তারা যে ক্ষমতাসীনদের বিকল্প তা ভোটারদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।
হারানো জনসমর্থন ফেরাতে এলডিপি যখন মরিয়া, ঠিক তখনই এই সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা আসে।দীর্ঘদিনের রাজনীতিক সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইশিবা এই নির্বাচনকে ‘জনগণের রায়’ হিসেবে দেখছেন।
এদিকে শাসক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এর মধ্যে প্রধান হল- বিতর্কিত ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে দলের সম্পর্ক; সমালোচকরা যে চার্চকে গুপ্তসংঘ বলে থাকেন। এরপরই প্রকাশ্যে আসে রাজনৈতিক তহবিল দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ঘটনা। কয়েক ডজন এলডিপি আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের আয়োজন থেকে অর্থ তসরুপের অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন কৌঁসুলিরা। কোটি কোটি ডলার আত্মসাতের ওই অভিযোগ শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটির মেরুদণ্ডকে দুর্বল করে দিয়েছে।
এমন এক সময়ে এ নির্বাচন হয়েছে, যখন জাপানিরা নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের জন্য হাঁপিয়ে উঠেছে। তিন দশক ধরে মজুরি না বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম গত দুই বছরে এতো বেড়েছে যা বিগত অর্ধ শতাব্দীতে দেখা যায়নি।এ মাসে ভোটাররা যখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি ডাক, ওষুধ, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মত নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে।