ছয় দিন ধরে এনটিসির ১২ চা বাগানে চলছে শ্রমিক ধর্মঘট
প্রান্তডেস্ক:বকেয়া মজুরির দাবিতে প্রায় সপ্তাহকাল ধরে মৌলভীবাজারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) বাগানগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘট চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাতা চয়ন না করার ফলে দুটি পাতা একটি কুঁড়িগুলো বড় হয়ে গুণাগত মান হারাবে।শনিবার (২৬ নভেম্বর) ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন ১২টি চা বাগানের (৪টি ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি) শ্রমিকরা দিনব্যাপী ধর্মঘট পালন করছেন। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। ছয় সপ্তাহের বকেয়া ও ১৭ মাসের পিএফ-এর টাকার দাবিতে এ আন্দোলন করছেন তারা।এদিকে, ধর্মঘটের ফলে বন্ধ রয়েছে চা কারখানা, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাঁচা চা পাতা।
সূত্র জানায়, এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলোর মজুরি সমস্যার বিষয়ে এর আগেও আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু কোনো সমাধানের পথ তৈরি হয়নি। দৈনিক ১৭৮ দশমিক ৫০ পয়সা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে সমস্যায় পড়তে হয়। কবে দেওয়া হবে তার কোনো নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছে না।
পাত্রখোলা চা বাগান, কুরমা চা বাগান, চাম্পারায় চা বাগান, মদনমোহনপুর চা বাগান, মাধবপুর চা বাগান, প্রেমনগর চা বাগান, চন্ডিছড়া চা বাগানসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এনটিসির অন্যান্য চা বাগানের শ্রমিকরাও আন্দোলনে অংশ নেন।
প্রায় প্রতিটি চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন বাগানের ফ্যাক্টরির সামনেও তারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। শনিবারের মধ্যে যদি মজুরি ও পিএফের টাকা না দেওয়া হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান চা বাগানের আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বাংলানিউজকে বলেন, এনটিসির চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। মজুরি না পেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বাজারে যে হারে জিনিসপত্রের দাম তাতে বাগানবাসীর অনেক কষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তারা কাজে ফিরবেন না।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে শুরু থেকে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ৪২ দিন ধরে এনটিসির একজন চা শ্রমিক তার মজুরি পাচ্ছেন না। এনটিসি কোম্পানিতে প্রায় ১২ হাজার চা শ্রমিক কাজ করেন। ১৭৮ দশমিক ৫০ পয়সা করে দৈনিক মজুরির হিসাবে তাদের মোট মজুরির বকেয়া প্রায় নয় কোটি টাকা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ম্যানেজমেন্ট চেঞ্চ হয়েছে। ফলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। আগামীকাল রোববার উচ্চ পর্যায়ের আমাদের কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের একটি মিটিং হবে। আশা করছি, সেখানেই চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হবে।
তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি সংগ্রহ করা হয়। কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ উচ্চ পর্যায়ের পরিবর্তন হওয়ায় সার্বিকভাবে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিকদের টাকা দিতে না পারায় আমাদেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্লাকিং না করতে পাওয়ার ফলে সেকশনের দুটি পাতা একটি কুঁড়িগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে কোয়ালিটি টি ম্যানুফেকচারিং করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান এমদাদুল হক।