রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দীনের অপসারণ নিয়ে বেশ অস্থির দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ সম্ভব কি না- এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে চলছে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মহড়া।
রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, না কি অন্তর্বর্তী সরকার তাকে অপসারণ করবে, এটাই এখন মূল আলোচনা। পদত্যাগ বা অপসারণ যা-ই হোক এর প্রক্রীয়া বা তার পরবর্তীতে কী হবে দেশের সে সম্পর্কে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
পোস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির আগের ও পরের বক্তব্য নিয়ে ফরহাদ মজহার লিখেন, ‘মিথ্যাচার শুধু প্রেসিডেন্ট চুপ্পু করেছেন, এটা ঠিক না। আমরা বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে এই প্রশ্ন এখন তুলতে চাই না যে, যারা গণ অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের হাজির করেছেন, তারাও মিথ্যাচার করেছেন। আমরা যখন প্রশ্ন করেছিলাম পদত্যাগপত্র কই? আমাদের দেখান, তখন কেন আপনারা চুপ ছিলেন? কেন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের পরম অভিপ্রায় হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন না করে আপনারা সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার বানালেন? কেন চুপ্পুর হাতে উপদেষ্টা সরকারের শপথ করালেন? কেন গণ অভ্যুত্থানকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীন করেছেন? এই তর্ক কি এড়াবার সুযোগ আছে?’
ওই পোস্টে তিনি আরও বলেন, আমরা বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও আপনারা ফালতু উকিলি যুক্তি দেখিয়েছেন, অথচ আমাদের সংকট মোটেও উকিলি বা সাংবিধানিক সংকট ছিল না। আমাদের সংকট ছিল রাজনৈতিক। একমাত্র রাজনৈতিক ভাবেই তার সমাধান সম্ভব।
পোস্টে আরও বলা হয়, আশা করব আপনারা আপনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। এখন দয়া করে আর উকিলি চতুরতা করবেন না; সাংবিধানিক শূন্যতা কিংবা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ফালতু যুক্তি দেবেন না। জনগণের অভিপ্রায়ই আইন এবং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের রায় দিয়েছে, আপনারা সেই ঐতিহাসিক রায় অস্বীকার করবার চেষ্টা করেছেন। আর করবেন না। সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কলংক থেকে মুক্ত হবার সুযোগ হাজির হয়েছে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এখন তার সমাধান করি এবং গণ অভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে নিয়ে যাই।
সংকট অবসানে তিনি লিখেন, ‘তাহলে কী করতে হবে? চুপ্পুকে তাড়াতে হবে। তার সমর্থনে কোন জেনারেল দাঁড়ালে তাকেও অপসারণ করতে হবে। জনগণের মিত্র সাধারণ সৈনিক ও সেনা অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে হবে। যেন ছাত্র-জনতা-সৈনিকের মৈত্রীর ওপর ভিত্তি করে গঠিত গণশক্তি মজবুত হয় এবং জনগণের নতুন রাষ্ট্রশক্তি কায়েম করা যায়। সর্বোপরি আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি, ফ্যাসিস্ট শক্তিকে দমন করতে পারি এবং সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ‘সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকারের পরিবর্তে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে এবং অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা (proclamation) দিতে হবে। কোন সাংবিধানিক ‘অধ্যাদেশ’ নয়। মাহফুজ, আসিফ, নাহিদ এবং আসিফ নজরুল — এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে কোন মূল্যে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। জনগণের ঐতিহাসিক রায় বাস্তবায়নের দায় আমাদের সকলের ওপর বর্তায়।
১. অনতিবিলম্বে কাটাছেঁড়া করা ৭২ এর সংবিধান এবং তার চরম বিকৃত রূপ শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বাতিল করতে হবে। ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার’ নামে কোন কলোনিয়াল বা ঔপনিবেশিক আইনের ধারাবাহিকতা চলবে না। বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণ করতে হবে।
২. অবিলম্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই সাময়িক নিষিদ্ধ করতে হবে। জার্মান, ইতালি ও স্পেন ও অন্যান্য রাষ্ট্রে ফ্যাসিস্ট সংগঠন নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ ব্যাতিক্রম নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ফ্যাসিস্ট প্রবণতাও কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
৩. অবিলম্বে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণে তৃণমূল থেকে জনগণের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে রাষ্ট্র নির্মাণে অংশগ্রহণ করানোর মধ্য দিয়েই স্থিতিশীলতা অর্জন, আর্থ-সামাজিক উন্নতির রূপরেখা নির্ণয় এবং সকল প্রকার ফ্যাসিস্ট শক্তি দমনের ক্ষেত্র তৈরি হবে।
৪. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সাথে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত হতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা অবৈধ ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল তাদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে না।