গুলিতে নিহত সিলেটের সাংবাদিক তুরাবের পরিবার পেলো প্রধানমন্ত্রীর অনুদান
রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করেন তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান জাবুর। বিষয়টি তিনি নিজে গনমাধ্যম -কে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সারা দেশে (সরকারি হিসেবে) নিহত ৩৪ জনের পরিবারের সদস্যের হাতে রবিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান তুলে দেন। অনুদানের মধ্যে ছিলো পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকার চেক ও নগদ ৫০ হাজার টাকা।এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের খোঁজ-খবর নেন। অনেকে এসময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রীর চোখেও তখন অশ্রু দেখা যায়।
আবুল আহসান জানান, শনিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক আমাদের খবর দেন এবং সরকারি খরচে উড়োজাহাজে আমরা ঢাকায় পৌছাই। আজ দুপুরে গণভবনে আমার হাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নগদ ৫০ হাজার টাকা ও সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
গুরুতর অবস্থায় সহকর্মীরা তাকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘণ্টা দুয়েক পর পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে সহকর্মীরা মহানগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ জুলাই তার বড় ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের উদ্দেশে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তবে পুলিশ সেটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হিসেবে নেয়। অভিযোগপত্রে ৮-১০ অজ্ঞাত পুলিশকে অভিযুক্ত করেছেন তুরাবের ভাই।
অভিযোগ দায়েরের পরদিন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈন উদ্দিন শিপন গনমাধ্যমকে বলেন- এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেটির তদন্ত চলছে। বুধবার রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত অভিযোগটি আমরা রেখেছি এবং জিডি হিসেবে রেকর্ড করেছি।
এটিএম তুরাব সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামের মরহুম আব্দুর রহিমের ছোট ছেলে। তাদের পরিবার বর্তমানে সিলেট মহানগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার যতরপুরে একটি বাসায় বসবাস করেন।
মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল সাংবাদিক এটিএম তুরাবের। বিয়ের কিছুদিন পর দেশ ছেড়ে চলে যান তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্ত্রী তানিয়া ইসলাম। কথা ছিল, তুরাবকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করবেন তানিয়া, কিন্তু তা আর হলো না। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় মৃত স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি প্রবাসী স্ত্রী।
তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান জানান, গত ১৩ মে বিয়ে করেন তুরাব। বিয়ের এক মাসের মাথায় তার স্ত্রী তানিয়া ইসলাম লন্ডন চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সেখানে তানিয়া মুষড়ে পড়েছেন। তুরাবের মৃত্যুর খবর শুনে পরদিনই তানিয়া দেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় আসতে পারেননি। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় শেষবারের মতো স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি তিনি।
এদিকে, তুরাবের মা মমতাজ বেগম ছেলেকে এভাবে হারিয়ে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি তিনি। বার বার বিলাপ করছেন ও মুর্ছা যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কাউকে পেলেই তিনি প্রশ্ন করছেন, ‘পুলিশ কেন আমার ছেলেকে মারল?’
তুরাবের লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল।