১৯৫৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন নাট্যকার ও অভিনেতা তুলসী লাহিড়ী। তিনি ১৮৯৭ সালের ৭ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার নলডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সুরেন্দ্রনাথ লাহিড়ী ছিলেন ডিমলা এস্টেটের ম্যানেজার। তুলসী লাহিড়ী বিএ ও বিএল পাস করে প্রথমে রংপুর শহরে এবং পরে কলকাতার আলিপুর কোর্টে ওকালতি করেন। এ সময় তার রচিত দুটি গান জমিরুদ্দিন খাঁ রেকর্ড করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। এর ফলে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ ও ‘মেগাফোন’ গ্রামোফোন কোম্পানিতে সংগীত পরিচালকের পদ লাভ করেন তুলসী লাহিড়ী। পরে আইন ব্যবসা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনয় শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি মঞ্চাভিনেতা, চিত্রাভিনেতা, নাট্যকার ও চিত্র পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তুলসী লাহিড়ী যখন চিত্রজগতে প্রবেশ করেন, তখন ছিল চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ। ক্রমে সবাক যুগের প্রচলন হয় এবং তিনি ৫০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রামবাংলার দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তাদের ওপর ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে তিনি ‘দুঃখীর ইমাম’ (১৯৪৭) ও ‘ছেঁড়া তার’ (১৯৫০) নাটক রচনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এ নাটক দুটি তখন বাস্তব জীবনভিত্তিক নাট্যচর্চার গোড়াপত্তনে সহায়তা করে। তার অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মায়ের দাবি’, ‘পথিক’, ‘লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার’, ‘মণিকাঞ্চন’, ‘মায়া-কাজল’, ‘চোরাবালি’, ‘সর্বহারা’ প্রভৃতি। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে মার্কসবাদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি নাটকগুলো রচনা করেন। তিনি একটি অর্কেস্ট্রা দলও গঠন করেছিলেন, যা ওই সময় খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে। সহস্রাধিক গানের গীতিকার হলেও তুলসী লাহিড়ীর কোনো গীতি সংকলন নেই।