মাগুরছড়া দু র্ঘ ট না র ২৭ বছর
জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ::মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের ২৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১৪ জুন। ১৯৯৭ সনের ১৪ জুন মধ্য রাত ১টায় উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাসকূপে মার্কিন অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর ড্রিলিং চলাকালে ভয়াবহ বিষ্ফোরণে বন, পরিবেশ, রেল ও সড়কপথ, পানজুম, বিদ্যুৎ লাইনসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বন ও পরিবেশের এইক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোন ক্ষতিপুরণ পায়নি।
জানা যায়, লাউয়াছড়া ফরেষ্ট বিটের অভ্যন্তরে মাগুরছড়া এলাকায় ১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৪ সালের দায়িত্ব পায় যুক্তরাষ্ট্রের তেল গ্যাস উত্তোলনকারী অক্সিডেন্টাল কোম্পানী। দায়িত্ব গ্রহণের পর অক্সিডেন্টাল গ্যাস ফিল্ডের ড্রিলিং কাজের জন্য সাবলিজ প্রদান করে ডিউটেক জার্মান কোম্পানীকে। ১৪ নম্বর ব্লকের মাগুরছড়াস্থ মৌলভীবাজার-১ গ্যাসকূপ খননকালে বিষ্ফোরণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬৯৫ হেক্টর বনাঞ্চলের পরিবেশের জীববৈচিত্র্য, রেল ও সড়কপথ, ফুলবাড়ি চা বাগান, খাসিয়া পুঞ্জির বাড়িঘর ও পান জুম, পিডিবির ৩৩ হাজার বিদ্যূৎ লাইনের।
পরোক্ষভাবে ২৮টি চা বাগানসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া ২শ’ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়, যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার। দুর্ঘটনার দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাগুরছড়া ঘেষা লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনে শত বছর ধরে বৃক্ষ লতাগুল্ম বেড়ে উঠা বিচিত্র্য বহু বর্ণের বন্য অর্কিড, পরগাছার নিবিড় সান্নিধ্যে মায়ামৃগ, ভাল্লুক, উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমা পড়া বানর, চিতাবাঘ, মথুরা, বুনোমুরগী, ধানেশ, অজগর, দাঁড়াস, কেউটে, সুতানলী, ব্যাঙ গিরকিট, তক্ষক, পেঁচা আর নাম না জানা হাজারো কীটপতঙ্গের একটি বৃহদ অংশ।
দূর্ঘটনার দুই বছরের মধ্যে ফুলবাড়ি চা বাগানের ক্ষতিগ্রস্ত টি প্ল্যান্টেশন এলাকার ক্ষতিপূরণ, খাসিয়া পুঞ্জির ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ২ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবীর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ও বাস মালিক সমিতিকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়ায় শেভরন ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্নকালে বিভিন্ন এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ফলে লতা, গুল্ম, বহু উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ ও ছোট প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত বড় বড় প্রাণীগুলোকে খাবার সংকটে ভুগতে হচ্ছে।
বন বিভাগের হিসাবমতে প্রত্যক্ষ ক্ষতি ৩২ দশমিক ৫৩ কোটি এবং অন্যান্য ক্ষতি মিলিয়ে ১৭৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। এই সময়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় পুরো হিসাব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬০৯ কোটি টাকা নিরূপন করে অক্সিডেন্টালের কাছে দাবি জানায়। দুর্ঘটনার সময়ে তৎকালীন অওয়ামীলীগ সরকারের খনিজ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার পর কমিটি ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করেছিল। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী অক্সিডেন্টালের দায়ীত্বহীনতাকেই দায়ী করা হয়।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়ান জানান, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রাকৃতিক বনের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারবে না। যারা এই বনে বসবাস করছি তা বুঝতে পারছি। বন বিভাগ সূত্রেমতে মাগুরছড়া দুর্ঘটনায় শুধু পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালের আগষ্ট মাসে অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া গ্যাসকূপসহ তাদের ব্যবসা ইউনিকলের কাছে হস্তান্তর করে। ইউনিকল দায়িত্ব নেয়ার পর ক্ষতিপূরন বিষয়ে টালবাহানা শুরু করে।
বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বনের ১৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপন করে দেয়া হলে এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোন সময়ে পুষিয়ে উঠার নয়।(সৌজন্যে: সিলেটভিউ২৪.কম)