জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনার ঐতিহাসিক দিন আজ

প্রান্তডেস্ক:আজ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনার ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দান করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ না নিলে সম্পূর্ণ বাকরহিত অসুস্থ নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসা কখনো সম্ভব হতো না। কবির কোনও পাসপোর্ট ছিলো না, ঢাকায় এসে কোথায় ও কীভাবে থাকবেন- সবকিছুই ছিল অস্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সরাসরি আলোচনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নাতি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়ের কথা শুনে সানন্দে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আর এ কারণেই মাত্র দু’দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কাজী নজরুলকে ঢাকায় আনা সম্ভব হয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর কবি আর বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। এ দেশের মাটিতেই তাঁর সমাধি হয়েছে। কবিকে বাংলাদেশে আনার ৫২ বছর পূর্ণ হলো আজ।
বঙ্গবন্ধুর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন মন্ত্রী মতিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের কৃতি সন্তান মুস্তাফা সারোয়ারকে ভারতে পাঠানো হয়। সঙ্গে দিয়ে দেন সরকারি অফিসিয়াল পত্র। নজরুলকে ‘হে কবি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখে দিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। চিঠিতে নজরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। চিঠি লিখে দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আশা করি কবিকে ছাড়া খালি হাতে আসবে না’। বিদ্রোহী কবি নজরুল সরকারিভাবে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে—খবর প্রচারিত হতে থাকে রেডিও এবং টেলিভিশনে। এতে কলকাতায়ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নজরুলকে বাংলাদেশে আনার বিপক্ষে চালাতে থাকে প্রচার-প্রচারণা। এমনকি বিক্ষোভও করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর সুসম্পর্কের ফলেই নজরুলকে বাংলাদেশে দিতে রাজি হয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে শর্ত থাকে যে, কবির অসুস্থতার ব্যাপারে যাবতীয় দায়-দায়িত্ব গ্রহণ এবং একটা সময় পরে কবিকে ভারতে ফিরিয়ে দিতে হবে।
২৪ মে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশ বিমান। খুব ভোরেই কবিকে বিমানে ওঠানো হয়। এতে অন্যান্যদের মধ্যে সহযোগিতা করেন কবির দুই ছেলে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ। ৩০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি উড়ে আসে ঢাকায়। কবিকে অভ্যর্থনা জানাতে লোকে-লোকারণ্য পুরো বিমানবন্দর এলাকা। মানুষের ভিড়ে বিমানের সিঁড়ি লাগানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না অপেক্ষামান হাজার হাজার জনতাকে। নজরুল-পাগল বাঙালিকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। গোপনে কবিকে নামানো হয় বিমানের পিছনের দরজা দিয়ে। কবিকে কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয়।