কবি ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার পাশা’রজন্ম দিন আজ
প্রান্তডেস্ক:আনোয়ার পাশা (১৫ এপ্রিল ১৯২৮ – ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও কথাসাহিত্যিক। তার পিতার নাম হাজী মকরম আলী আর মাতার নাম সাবেরা খাতুন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ঢাকার মিরপুরের বধ্যভূমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী আল বদর বাহিনীর সদস্যদের হাতে তিনি নিহত হন।
ছাত্র ও কর্মজীবন
আনোয়ার পাশা মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মহকুমার রাঙ্গামাটি চাঁদপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ডবকাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সন অনুযায়ী তার জন্ম হয় ২ বৈশাখ ১৩৩৫ সনে। তিনি ১৯৪৬ সালে ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রাসা থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতকার্য হন। কিন্তু ১৯৪৮ সালে আই এ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে। এরপর তিনি চলে আসেন রাজশাহী কলেজে। এখান থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক পাশ করেন ১৯৫১ সালে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যেই স্নাতকোত্তর সম্মাননা অর্জন করেন।
মানিকচক হাই মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে আনোয়ার পাশার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ১৯৫৪ সালে ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসায় এবং ১৯৫৭ সালে সাদিখান দিয়ার বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে এ কলেজেরই বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থাকেন।
১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৯ সালে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি স্থায়ী প্রভাষক হন। ১৯৭০ সালে তিনি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।
মৃত্যু
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাহায্যকারী আল বদর গোষ্ঠীর একটি দল তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নিকট হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামে মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
হত্যার বিচার
৩রা নভেম্বর, ২০১৩ সালে, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আনোয়ার পাশা সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সাহিত্যকৃতি
আনোয়ার পাশা ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার সাহিত্যকর্মে ফুটে ওঠে দেশাত্মবোধ, মননশীলতা এবং প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার। তার সাহিত্য জীবনের সূচনা ছাত্রাবস্থায়। রাজশাহী কলেজে বিএ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি হাস্নাহেনা শিরোনামে একটি রম্যরচনা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত প্রথম উপন্যাস রাইফেল রোটি আওরাত রচনার জন্য তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস
- নীড় সন্ধানী (১৯৬৮)
- নিশুতি রাতের গাথা (১৯৬৮)
- রাইফেল রোটি আওরাত (১৯৭৩)
কাব্য
- নদী নিঃশেষিত হলে (১৯৬৩)
- সমুদ্র শৃঙ্খলতা উজ্জয়িনী (১৯৭৪)
- অন্যান্য কবিতা (১৯৭৪)
সমালোচনা
- সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল (১৯৬৭)
- রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (প্রথম খণ্ড-১৯৬৯, দ্বিতীয় খণ্ড-১৯৭৮)
গল্পগ্রন্থ
- নিরুপায় হরিণী (১৯৭০)
সম্মাননা
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭২,মরণোত্তর)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২০,মরণোত্তর)