সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপির ‘তিন কৌশল’
প্রান্তডেস্ক:সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ‘তিন কৌশল’ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক-এ তিন দিক থেকে নীরবে সরকারকে কাবু করার কৌশল হাতে নিয়েছে দলটি। যার ধারাবাহিকতায় অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বিরত থাকা, সেবামূলক ফি, খাজনাসহ বিভিন্ন প্রদেয় কর না দেওয়া, ব্যাংকে অর্থ আমানত না রাখা এবং আদালতে হাজিরা না দেওয়ার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এজন্য বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো প্রতিদিনই লিফলেট বিতরণ করছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চেয়েছে গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বিএনপি, বাম ও ইসলামপন্থী অন্তত ৬৩ দল নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে এবারের নির্বাচনও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। এটি সরকারকে আরও বেশি কূটনৈতিক চাপে ফেলবে।
পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক সংকটও রয়েছে। এরপরও বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থক যারা প্রবাসে থাকে তারা যদি অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখে, তাহলে চলমান ডলার সংকট আরও বাড়বে। দেশের অভ্যন্তরে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কিছু অংশও যদি ট্যাক্স এবং ইউটিলিটি বিল দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে।
দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মামলায় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসব নেতাকর্মীও যদি আদালতে হাজিরা দিতে না যান, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলন ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে, নাকি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবে। দুই কাজ একসঙ্গে করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে না। তদুপরি বর্তমানে বিএনপির ২৩ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী কারাগারে। সেখানে এখন বন্দীসংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। এ অবস্থায় আরও নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে সরকার কোথায় রাখবে? সব মিলিয়ে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন সরকারকে নতুন করে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ফেলবে।
এদিকে ২৮ অক্টোবরের পর এই প্রথমবারের মতো গণসংযোগকে কেন্দ্র করে প্রায় সব সাংগঠনিক জেলায় নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পেরেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান বিএনপি নেতারা। তারা জানান, গত দুই দিনে ৬০ লাখের মতো লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। যুগপথে থাকা সমমনাদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীরও তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিদিনই রাজধানীর সব সাংগঠনিক থানায় জামায়াত লিফলেট বিতরণ করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় থেকে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। যে কারণে নেতাকর্মীদেরও আগের চেয়ে উজ্জীবিত দেখা গেছে। যা আগামী দিনের কর্মসূচিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে নেতারা।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো চার দফায় ৫ দিন হরতাল এবং ১১ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। নতুন করে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার গণসংযোগ এবং আগামী রবিবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো। যুগপৎভাবে এসব কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এ ছাড়া এই আন্দোলনে আলাদা আলাদাভাবে গণতান্ত্রিক বাম জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি প্রভৃতি দলও রাজপথে রয়েছে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সংসদ বাতিলের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপি ও সমমনা জোট যুগপৎ ধারায় আন্দোলন করে আসছে।