প্রান্তডেস্ক:দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলাকে পাইপলাইনে যুক্ত করা না গেলেও জেলার বাইরে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে সরকার। কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে এ গ্যাস পৌঁছে দেয়া হচ্ছে শিল্প-কারখানায়। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্যাস সরবরাহ শুরু হলো। ঢাকার ধামরাইয়ে বস্ত্র খাতের একটি কারখানায় গেছে গ্যাসের প্রথম সরবরাহ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিএনজি সিলিন্ডারে করে ভোলার গ্যাস সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, ভালুকা-গাজীপুরের জ্বালানিসংকটে ভোগা কারখানাগুলো গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। মূলত তিতাস গ্যাস কোম্পানির আওতাধীন গ্রাহকদের মধ্যে এ গ্যাস বিতরণ করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের ইতিহাসে এভাবে গ্যাস সরবরাহের এটি প্রথম ঘটনা। সিলিন্ডারের পাশাপাশি ভোলার গ্যাস বাইরে আনতে বরিশালের সঙ্গে একটি পাইপলাইন করা হবে। এরপর তা খুলনার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।
এতদিন সঞ্চালন লাইন না থাকায় দ্বীপজেলা ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। সেই সংকট কাটাতে ওই গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। বলা হয়, এই প্রক্রিয়ায় তিন হাজার পিএসআই চাপে গ্যাস সিলিন্ডারজাত করা হবে। এরপর নৌপথে পরিবহন করে আনা হবে রাজধানী ঢাকায়। বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দেয়া হবে গ্যাস সংকটে থাকা শিল্প-কারখানায়।
এর ফলে গ্যাস সংকটে থাকা শিল্প-কলকারখানাগুলোর উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতি হবে, যা দেশের জিডিপিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। আর বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে তা সরবরাহ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সুন্দরবনের কাছ থেকে কিনে নিয়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহের কাজটি করবে সিএনজি খাতের বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি সিলিন্ডারে গ্যাস থাকবে সাড়ে তিন হাজার ঘনমিটার। বিশেষ ট্রাকে করে এটি পরিবহন করা হচ্ছে। এই সিএনজির প্রতি ঘনমিটারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। আর পাইপলাইন থেকে এখন সরাসরি শিল্প গ্যাস পাচ্ছে ৩০ টাকায়।
প্রতিমন্ত্রী বিপু বলেন, উত্তরাঞ্চলেও গ্যাস সরবরাহের চিন্তা আছে। রংপুর পর্যন্ত ইতিমধ্যে গ্যাস পাইপলাইন চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, শিল্পে গ্যাসের এত বেশি চাহিদা, দামের প্রশ্ন আসছেই না।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, দিনে এখন ৫০ লাখ ঘনফুট সরবরাহ করা হবে। তবে ভোলার গ্যাস সরবরাহ কেবল শুরু। এটি ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে। সম্পদ মাটির নিচে না রেখে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই আরও বেশি কূপ খনন করে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি কমাতে পারলে অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, চাহিদা মেটাতে নানা উপায়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। এলএনজি আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আনার চিন্তা করা হচ্ছে।
ইন্ট্রাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আগে থেকেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। বর্ষাকাল, বৈরী প্রকৃতিসহ নানা কারণে সরবরাহ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির চেয়ারম্যান এইচ এম হাকিম আলী।
ইন্ট্রাকো ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মধ্যে ১০ বছরের চুক্তি সই হয়েছে গত ২১ মে। এর আগে ১০ মে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে তিতাসের আওতাধীন শিল্প-কারখানায় সরবরাহের বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে জ্বালানি বিভাগ। এতে গ্যাসের দাম, বিভিন্ন সংস্থার মার্জিন, গ্যাস সরবরাহকারীর জন্য পালনীয় শর্তের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করলেও প্রথম পর্যায়ে ইন্ট্রাকোকে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের কাজ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে দিনে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে আনা হবে। পরে তা আড়াই কোটি ঘনফুটে উন্নীত করা হবে।
কোম্পানি পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ১৭ টাকা, সিএনজি স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে, যা ৩৫ টাকা। এই ১৭ টাকার মধ্যে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, সুন্দরবন, আরপিজিসিএলসহ বিভিন্ন কোম্পানির মার্জিন, সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ও ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সিএনজি স্টেশনগুলো প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে আট টাকা মার্জিন পায়। সেখানে ভোলার গ্যাস আনতে ইন্ট্রাকো পাচ্ছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ব্যাখ্যা হচ্ছে, সরবরাহকারী এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভোলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত গ্যাস আনতে ২৩০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।