বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী সহিংসতা, ময়মনসিংহে নিহত এক
প্রান্তডেস্ক:নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনারা না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই। দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা না দেয়ার নির্দেশ থাকলেও মাঠ দখলের লড়াই ঠিকই আছে। কোথাও সংঘাত হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে। নির্বাচনকে ঘিরে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে একজন নিহত হয়েছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরভবানীপুর কোনাপাড়া গ্রামে। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে। নিহত রফিকুল ওই এলাকার নূর হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় মর্জিনা খাতুন নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, চট্টগ্রামের পটিয়ায় আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
শামসুলের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় তার ৮ কর্মী-সমর্থক আহত হন এবং তাদের ৬টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
যোগাযোগ করা হলে শামসুলের ছোট ভাই মুজিবুল হক নবাব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সাড়ে ৪টার দিকে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে আমরা কাশিয়াইশ ইউনিয়নে এক পরিচিতের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে যাই। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুলের প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।’
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। আমার নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য শামসুল নাটক করেছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত করাই তার উদ্দেশ্য।’
জানতে চাইলে পটিয়া ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘হামলার ব্যাপারে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ সহ দু’টি ক্যাম্প ভাঙচুর ও একটি ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে মামুদপুরে হামলা করে আহত করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে। শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর সময় তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। বিভিন্নস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী
কোন নির্বাচনী মিছিল বা প্রচারণা বের হলে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তাদের আশপাশে মহড়া দিচ্ছে হেলমেট পরিহিতরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের লোকেরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর স্কুলের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে এ কে আজাদের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে দুর্বৃত্ত দুই রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। একইদিনে
ঈশান গোপালপুরের ৯ নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কাম্প ভাঙচুর করা হয়। একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীদাশের হাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেকটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে বাঁশ-খুঁটি উঠিয়ে নিয়ে যায়। ওমেদিয়া বাজারে একটি দোকানে স্থাপন করা স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে সেটি আর না খোলার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। ১ নং ওয়ার্ডে রাতের আঁধারে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি পটকা ফুটিয়ে কর্মীদের হাতে থাকা লিফলেট ছিঁড়ে ফেলেছে।
এর আগে শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রাসুল তানিয়া বলেন, আমরা ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বের হয়েছিলাম। আলীপুরের রাজ্জাকের মোড়ে আমরা উপস্থিত হলে প্রতিপক্ষ শামীম হকের সমর্থকেরা প্রায় ৩০-৪০টা মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে। ওই এলাকায় এ কে আজাদের কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারবো না বলে আমাদের চলে যেতে বলে এবং এ সময় আমাদের কাছে থাকা ঈগল মার্কার লিফলেট ছিনিয়ে নেয়। তারা চুমকি নামে একজন নারীনেত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
এছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মামুদপুর এলাকায় এ কে আজাদের সমর্থক রনি মোল্যা ও কাইয়ুম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহত রনি মোল্লাকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
কাইয়ুম মোল্যা বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই এ কে আজাদ চাচার সমর্থক। আমার বাবা নান্নু মোল্লা এই সেন্টার কমিটির সভাপতি।
আমরা ঈগল মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে আমার বড় ভাইয়ের মুদি দোকান খুলতে গেলে স্থানীয় মোস্তফার নেতৃত্বে আজাদ, আসাদ ও চুন্নু আমাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। তারা এ সময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যে, বলতে থাকে তোরা আর আজাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবি না। এখন থেকে নৌকার প্রচারণা করবি,। তা নাহলে তোদের মেরে ফেলবো বলে আমাকে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ভাই রনি আমাকে বাঁচাতে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে। আমার ভাই রনি এখন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার ঘটনার নেতৃত্বে থাকা মোস্তফা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের ভাতিজা বলে জানান কাইয়ুম মোল্যা।
এব্যাপারে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী সমন্বয়ক শোয়েবুল ইসলাম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছি। আমরা আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নই। ফরিদপুর-৩ আসনে আমাদের প্রচার-প্রচারণায় যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে তাতে আমাদের সমর্থকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে কম যাবে। আমরা চাই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি আনন্দমুখর নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের প্রতিপক্ষ হামলা ভাঙচুর বন্ধ করবে। আমরা এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও সুদৃষ্টি কামনা করি।