প্রখ্যাত লেখক, অধ্যাপক ও সমালোচক আবু সয়ীদ আইয়ুব ১৯০৬ সালে কলকাতার এক অবাঙালি উর্দুভাষী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল মোকারেম আব্বাস ছিলেন বড়লাটের করনিক, মা আমিনা খাতুন। আইয়ুব শৈশবে কিছুদিন সিলেটে কাটান। তিনি কলকাতার সেন্ট অ্যান্টনিজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রি নিয়ে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদে পড়তে আগ্রহী হন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পরে দর্শনে চলে যান। তিনি কিছুদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনাও করেছেন। তিনি ছিলেন আত্মমগ্ন, সৃষ্টিমুখর; বন্ধু ও সজ্জন সভায় বিদগ্ধ বক্তা ও বিতার্কিক। ত্রিশের দশক থেকে পরিচয় ও চতুরঙ্গ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। ১৯৪২ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার সমর্থন ও বুদ্ধিজীবীদের সহায়তা বিশেষভাবে স্মরণীয়। তার ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’(১৯৬৮) বইটি সাহিত্য জগতে আলোড়ন তোলে। এ ছাড়া ‘পান্থজনের সখা’ ও ‘পথের শেষ কোথায়’ অনুবাদ গ্রন্থ, ‘গালিবের গজল থেকে’ বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। সম্পাদনা গ্রন্থ ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ (হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সহযোগে, ১৯৪৭), ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ ও বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বনিধি’ উপাধি প্রদান করে। দীর্ঘকাল পারকিনসনস রোগে ভোগার পর ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।